হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 15

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 15

বিশ্বনবী (সাঃ)-এই ইসলাম প্রচার

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানুষের নিকট আল্লাহর বাণী প্রচার কাজে মনোনিবেশ করলেন। তিনি যখন সকলকে দেবদেবীর মূর্তি পূজা পরিত্যাগ করে নিরাকার এক আল্লাহ্ ইবাদত বন্দেগী করতে আহ্বান করলেন, তখন সকলেই তাঁর প্রতি ভীষণভাবে ক্ষেপে উঠেন
জিব্রাঈল (আ) এসে নবী করীম (সাঃ) কে নামায পড়ার নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনামত্র সূরা ফাতিহা ও তখন নাযিল হল ।

সূরা ফাতিহার এ মধুর সুর। মরু আরবের আধার হাওয়ায় সে সূর সুরভিত জ্যোৎস্নার মত দিক দিগন্তে বেগে যায়।
তা চোখে পড়ে এক বালকের। বালকের নাম আলী, তিনি নবীজীর চাচা আবু তালিবের পুত্র।
তিনি নবীজী ও খাদীজার সংসারেই থাকেন। আলীপ বালক মন সে সূরে গভীর ঝংকার তোলে। 

দশ বছরের আলী ইসলাম গ্রহণ করেন

আলী (রাঃ)-এর পরে ইসলাম কবুপ করেন ক্রীতদাস যায়েদ (রাঃ), পর পর নবীজীর বিজ্ঞা ও বিচক্ষণ বন্ধু এবং ধনী ব্যবসায়ী হযরত আবূবকর (রাঃ)-এর ব্যক্ত করলেন ও কুরআনের যে অংশ যে সময় পর্যন্ত তাঁর কাছে নাযিল হয়েছে তাও পড়ে শানালেন। আর বললেন :
এক আল্লাহর উপাসনা করা এবং বিভিন্ন দেবতার পূজা পরিত্যাগ করার আদেশ তাঁকে দিলেন।

তখন বিশ্ব ाচ না করে ই আবুবকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ কররেন। আবুবকর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর সহযোগিতায় ক্রমে ক্রমে উসমান (৩য় খলীফা) আবুদর রহমান, তালহা, যুবাইল, আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ আরো অনেকে ইসলাম কবূল করলেন।
নব ধর্মের এই নতুন দাওয়াত গ্রহণে নারীরাও মিলে যে মানুষের জীবন, নর-নারীর যুগল প্রীতি ও আত্মসমর্পণ লাভ করে সে জীবনের ধর্ম 'ইসলাম'।

তাঁর আবির্ভাব লগ্নেই বিপুল শক্তি ও সম্ভাবনার অধিকারী হন ৬১০ হতে ৬১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ তিন বছর।
এভাবে গোপনে ইসলাম প্রচারের ফলে নবী করীম (সাঃ)-এর শিষ্য বা ছাহাবীর সংখ্যা চল্লিশে গিয়ে দাঁড়াল।
আল্লাহ্ নির্দেশ দিলেন- “আপনার নিকট-আত্মীয়দের সাবধান করুন, আর যে সকল বিশ্বাসী ব্যক্তি আপনার অনুসরণ করে তাদের সযত্নে রক্ষনাবেক্ষণ করুন।”

আদেশ পেয়ে নবী করমী (সাঃ) আত্মীয়-স্বজনদের এক ভোজসভায় দাওয়াত করলেন তারপর ভোজন শেষে তাঁর সামনে অপেকআন মহাপিবদ সম্পর্কে সাবধান করলেন । কিন্তু আবূ লাহাবের প্রবল বিরোধীতার ফলে তাঁর প্রয়াস ব্যর্থ হল। ব্যর্থতাই সফলতার পথকে সুপ্রশস্ত করে। 

তাই তিনি নিরস্ত হলেন না তিনি একদিন সোজা দিয়ে বিবি হাজেরা (রাঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত সে সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন বিপদকালে এ পর্বতশীর্ষ হতে সংকেত বাণী করে দেবসাসীকে সাবধান করার প্রথা প্রচলিত ছিল। 

তাই তিনি যখন ঐ পর্বতশীর্ষ হতে সংকেত ধ্বনি করলেন, তখন দলে দলে মক্কাবাসী ভয়ংকর কোন বিপদের আশংকা করে সে পর্বত পাদমূলে এসে সমবেত হল । তিনি প্রত্যেক গোত্রের মানুষকে সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করলেন “আমি বল এ পর্বতের আড়ালে একদল শত্রু তোমাদের আক্রমণ করার জন্য অপেক্ষা করছে, তা হলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? 

তখন সবাই সমস্বরে উচ্চকণ্ঠে উত্তর দিল,
নিশ্চয়ই! কেননা, মোহাম্মদ (সাঃ) যে তাদের কাছে 'আল-আমীন' অর্থাৎ চিরবিশ্বাসী। সত্য ছাড়া তারা কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনেনি ।

তখন নবীজী তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন । "তোমাদের ক্ষতি করার  জান্য শায়তাদের সেনাবাহিনী অপেক্ষা করছে। তোমরা সবাই সাবধান হও। পৌওলিকাত পরিত্যাগ কর। নিরাকার এক  আল্লাহর উপাসনায় আগ্রসর হও। তার কথা শুনে আবু লাহাব তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন জাহাননামে যাও।
অত্যন্ত তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বললেন সাথে সাথে আবু লাহাবের সাথীরা হৈ হৈ করে উঠল। 

তারা মোহাম্মাদ (সাঃ)-কে 'আল-আমীন'-এর পরিবর্তে 'আল-মজনুন বলতে শুরু করলো। একদিন নবীজী যখন কয়েকজন সাথী নিয়ে কা'বাগৃহে গিয়ে লা - শরীক আল্লাহর বাণী প্রচার করলেন, তখন আৰু লাহাবের দল মার মার করতে করতে দল বেঁদে তার উপর আএুমন শুরু করলো। 

নবীজী  রক্ষা করার জন্য তাঁকে ঘিরে দাড়ালো সবাই! তখন খাদিজা (রাঃ) -এর আগের  স্বামীর ঔরসজাজ পুএ হারেস-বিন-আবূহালা তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিলেন ।

হারেস বিন আৰু হালাই হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহী, কা'বাগৃহে নামাযরত হলে তারা মোহাম্মাদ (মাঃ)-এর নায়ক লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করত একদিন নামায পড়তে পড়তে যেই মাত্র তিনি সেজদায় গেলেন, অমনি তারা একটি মৃত গলিত উটের দুর্গম বিরাট নাকি তাঁর পিঠের উপরে চাপিলে দিল। 

আবু জেহেরে স্ত্রী হিন্দা এবং আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল তাঁর চলার পথে বিষাক্ত কাঁটা বিছিয়ে দিতে লাগল। আর নোংরা আবর্জনা খুঁড়ে মারতে লাগল । লক্ষ্য করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ছোট ছোট পাথরকণা ছুঁড়ে মেরে তাঁকে তাড়া করতে লাগল।

নবুওয়াত প্রাপ্তির ষষ্ঠ বর্ষে (৬১৫ খ্রি.) নবী করীম (সাঃ) সাফা পাড়াড়ে বসেছিলেন। এমন সময় আৰু জাহেল সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গালাগালি করতে লাগল এবং তাঁকে লক্ষ করে একটা পাথর ছুঁড়ে  মারল ।

সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মস্তক হতে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে লাগল। এ অবস্থা শুনে নবীজীর চাচা হামজা ছুটে গিয়ে তীরের ফলার আঘাতে আবৃ জোহালের মন্তর ক্ষত-বিক্ষত করে দিলেন।
এরপর নবীজীর কাছে গিয়ে বললেন : “ভাইপো আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।” দ্বীনের নবী (সাঃ) বললেন : “চাচাজী। 

প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে যদি আপনি ইসলাম গ্রহণ করতেন তাবেই আমি সত্যই খুশি হতাম।
স্বপ্নবিষ্টের মত স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠে হামজা ঘোষণা করলেন :
"লা-ইলাহা ইললাললা মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ"।
এরপর হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলেন। আস্তে আস্তে ইসলামের এনে মানুষ জড় হতে লাগল।