হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 3

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 3

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জন্ম ও বংশ পরিচয়

আরব দেশ আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের নিকট পুণ্যময় দেশ হিসেবে পরিচিত। যার বুকে সমগ্র মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরীফ অবস্থিত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র রওজাকে বুকে ধারণ করে তাকে ।

সারা দুনিয়ার মধ্যে অনুপম মহিমায় ও সেরা গৌরবময় দেশরূপে পরিণত করেছে যে আরবের কেন্দ্র থেকে নিখিলের নিপিড়ীত মানবের মুক্তির দূত আগমন করে সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে, যে আরব ভূমি থেকে আলোকমশাল বের হয়ে সারা বিশ্বকে আলোকোজ্জল করেছে, প্রাচীন কালে সে আরব দেশের অবস্থা ছিল খুবই করুন।

বলতে গেলে আরববাসীরা সে সময়টিতে মানবসুলভ আচরণ ভুলেই গিয়েছিল। ধর্ম-কর্ম বলতে তাদের সমাজে তখন কিছু ছিল না। ছিল শুধু অত্যাচার পাপাচার আর পশু সদৃশ কার্যকলাপ। সৃষ্টিকর্তা যে কেহ আছেন সেকথা তখন আরবের লোকেরা প্রায় ভুলে গিয়েছিল ।
তখন সারা দেশব্যাপী কেবল অধর্ম ও কুকর্মের স্রোত বয়ে চলছিল। আর সে সর্বগ্রাসী প্রবল স্রোতের টানে সেখানকার লোকগুলো সব যেন অসহায় অবস্থায় গভীর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছিল।

এ পরিবেশ এবং পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছিল। মাঝে মধ্যে দেখা যেত, নদীর তীব্র স্রোতের টানে যখন সবকিছু ভেসে যেতে থাকে, তখন তার মধ্যে থেকেও দু একটি জিনিস এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে, তীব্র স্রোতের শত চেষ্টাও সেগুলিকে ভাসিয়ে নিতে পারে না। এমনি ভাবেই সে যুগের ঐ বাতিল স্রোতের টান থেকে যারা বাঁচতে পেরেছিল তাদের পরিচয় এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

তখনকার আরব দেশে এ ধরনের লোকদের মধ্যে কিছু লোক ছিল খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী। তারা হযরত ঈসা (আ) তথা যীশু খৃষ্টের অনুসারী ছিল
তারা মোটামুটিভাবে ধর্ম-কর্ম, সভ্যতা, ভদ্রতা ও শালীনতা প্রভৃতি বজায় রেখেছিল । তারা তখনকার আরবভূমিতে ব্যতিক্রমধর্মী লোক ছিল।
তাদের মধ্যে একটি পরিবার ছিল ধর্মের প্রতি খুব বেশি যত্নবান এবং অধিক শ্রদ্ধাশীল। সে পরিবারের লোকজন এক সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করত এবং কোনরূপ কুসংস্কার কিংবা অসদাচরণের শিকার হত না ।

তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রোজগার করত। তখনকার প্রচলিত শিক্ষা-দীক্ষার প্রতিও তাদের আকর্ষণ ছিল এবং পরিবারে প্রায় সকলেই কিছু না কিছু লিখা-পড়া জানত ।
কুরাইশ বংশে ষষ্ঠ পুরুষের নাম ছিল কুরাইশ ইবনে কিলাব । তিনি একজন বিশেষ প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন।
কুরাইশ ইবনে কিলাবের তিন পুত্র ছিল আবদুল মান্নাফ, আবদুদ্দার ও আবদুল ওজা।

আবদুল মান্নাফের পুত্রের নাম ছিল হাশেম । ইনিও অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সেইজন্য তাহার বংশধরদিকে হাশেমী বংশ বলা হইত। এই সম্মানিত হাশেমী বংশেই জন্মগ্রহণ করেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
হাশেমের এক পুত্রের নাম ছিল আবদুল্লাহ্। আবুদল্লাহ্ পত্রের নাম ছিল মুহাম্মদ । ইনিই আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

কুসাই ইবনে কিলাবের অন্যতম পুত্রের নাম ছিল আবদুল ওজ্জা। আবদুল ওজ্জার পুত্রের নাম ছিল আসাদ এবং আসাদের পুত্রের নাম ছিল খুওয়াইলিদ । খুয়াইলিদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না- ছিল শুধু একটি মাত্র কন্যা । এই কন্যাই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সহধর্মিনী- হযরত খাদীজা (রাঃ)।

তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাহার সহধর্মীনী খাদীজা (রাঃ) এই উভয়েই ছিলেন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ কুরাইশ বংশের লোক।
খোয়াইলিদ নামক একজন লোক তৎকালীন আরবে শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে, গুণে ও মান-সম্মানে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তা ছাড়া তিনি স্বীয় গোত্রীয় ও পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে ব্যবসায়ী কর্ম অবলম্বন করে অল্পদিনেই বহু ধন-সম্পদেরও অধিকারী হয়েছিলেন। 

অত্র পরিবারটি মক্কা নগরীর কোন এক এলাকায় বসবাস করত । খোয়াইলিদ তখনও বিয়ে করেননি। অথচ তার বিয়ের বয়স হয়েছে আরও কিছুদিন আগে। তার অভিভাবকগণ তার জন্য চারিদিকে উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান করছিল। একই সময় মক্কার অন্য এক এলাকায় আরেকটি উত্তম বংশীয় পরিবার বসবাস করত। বংশীয় আভিজাত্য ও ভদ্রতায় এ পরিবারটিও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। তারা মুর্তি পূজা করত না। 

ধর্মের দিক দিয়ে শুধু এক আল্লাহর উপাসক ছিল এবং আল্লাহর উপর তাদের আগাধ বিশ্বাস ছিল । তাই সৎভাবে জীবন যাপনই ছিল তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ।
এ জন্যেই তখনকার মক্কার জঘন্য পরিবেশ পরিবারটিকে এতটুকু মাত্র স্পর্শ করতে পারে নি। এ পরিবারের জনৈক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্য ফাতিমা নাম্নী খুবই রূপসী ও গুণবতী একটি কন্যা ছিল ।

শুধু রূপ গুণেই নয়, চরিত্রও ছিল তার অতিশয় নির্মল । শিক্ষা-দীক্ষাও তার ছিল স্বাভাবিক মত ।
তার সে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। যার ফলে তাকে বিয়ে করার জন্য বহু স্থান থেকেই প্রস্তাব আসতে লাগল ।

ফাতিমার পক্ষ থেকেও তার অভিভাবকগণ যোগ্য পাত্রের সন্ধান করছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ফাতিমার যোগ্য পাত্র হিসেবে শিক্ষায়-দীক্ষায়, মানে-মর্যাদায় এবং জ্ঞানে-গুণে বিভূষিত খোয়াইলিদকেই পছন্দ করলেন। যথাসময়ে তাদের বিয়ে সুসম্পন্ন হয়ে গেল ।

এ দম্পতির ঘরে ৫৫৫ খ্রি. সূর্য উঠার কিছু পরেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হলেন তাঁর নাম বিবি খাদীজা (রাঃ)। যিনি পরবর্তী জীবনে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে উম্মুল মু'মিনীন হিসেবে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
এর পর হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রথমা স্ত্রী হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রাঃ) নামে সুপরিচিতা হলেন ।