হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 16

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 16

দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন

মুহম্মদ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর দাম্পত্য জীবন ছিল
সারা দুনিয়ার এ ধরনের দাম্পত্য জীবনের নজীর পাওয়া যাবেনা। তাদের পারিবারিক জীবন এত মধুর ও সুখকর হওয়ার প্রধান কারণ হল, তাদের একজন সুনিয়ার সেরা আদর্শ পুরুষ, অন্যজন দুনিয়ার সেরা রমনী।

সুর: এমন গল দম্পতির জীবন সুখ-শান্তিময় না হলে আর কোন স্বামী-পরিবারে সুখের আশা করা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের জন্য কতখানি সহযোগিতা সহানুভূতি ও নলতা প্রদর্শন করতে পারে, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অপরের যে বিরূপ অংশভাগী হতে পারে।

তার সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (হযরত খাদীজা (রাঃ))-এর পারিবারিক জীবনের দৃশ্য থেকেই শিক্ষা লাভ করা
সরে বলতে গেলে শুধু এটুকু বলা যায় যে, দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনের প্রকৃত আদর্শ মুহাম্মদ (সাঃ) এবং হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর
পরিবারিক জীবন দুনিয়ার কোন পারিবারিক জীবনই তাঁদের জীবনের সাথে তুলনীয় নহে ।

হযরত খাদীজা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি যে কিরূপ আত্মত্যাগী ও নির্ভরশীল ছিলেন, তার দৃষ্টান্ত হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিপুল ধন-সম্পদরাশি নির্দ্বিধায় স্বামীর হস্তে তুলে দেয়ার মধ্যে দিয়েই লাভ করা যায়।
পক্ষান্তরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এ সম্পদ লাভ করেও তা নিজের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তির জন্য ব্যয় করলেন না; বরং উহা নিঃস্ব, দরিদ বা অভাবগ্রস্ত মানুষের হাতে অকাতরে বিলিয়ে দিলেন।

ফলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরিবারে যে অভাব সে অভাবই আবার দেখা দিল
কিন্তু ধনীর দুহিতা হযরত খাদীজা (রাঃ) ধন-সম্পদে আরবের শ্রেষ্ঠ মহিলা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিয়ের পূর্বে যাঁর সম্রাজ্ঞীর হালে জীবন কাটছিল, তিনি স্বামীর সংসারের এ অভাব ও দারিদ্রকে খুশি মনে বরণ করে নিলেন।

অসংখ্য দাস-দাসী পরিবেষ্টিত যে খাদীজা (রাঃ) সংসারে সামান্য একটি কাজও কখনও নিজের হাতে করেন নাই, তিনি স্বামীর অভাবী সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম নিজের হাতে করতে লাগলেন ।
তাঁর অবস্থা দেখে মনে হতে লাগল যে, ধনী গৃহের বিলাস জীবনাপেক্ষা এ অভাবগ্রস্ত সংসারে গরিবী জীবন যাপন করাকে হযরত খাদীজা (রাঃ) মনে প্রাণেই ভালবাসেন ।

মনে হত যেন হযরত খাদীজা (রাঃ) এ অনটনময়, জীবনই স্বচ্ছল জীবন যাপন অপেক্ষা খুশি ।
এই অবস্থার মধ্য দিয়েই অনুমান করা যায় যে, তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি কত বেশি আকৃষ্ট ও অনুরক্ত ছিলেন
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কার কাফির কোরাইশ কুলের নিযার্তন ও হঠকারিতার ফলে যখন একবার স্বগোত্রীয় লোকজন, সমাজ ছেড়ে এক পার্বত্য এলাকায় গিয়ে তিনটি বছর প্রায় বন্দী দশায় বাস করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এ দীর্ঘ সময় বাহিরের কোন লোকজনের নিকট যাতায়াত, রুজী-রোজগার বা খাদ্য সংগ্রহের জন্য বাজার বা নগরে গমনাগমন পর্যন্ত বন্ধ ছিল।
তখন এ চরম সঙ্কট কালে হযরত খাদীজা (রাঃ) সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টির সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে থেকে এক মাত্র সঙ্গিনী ও খেদমত কারিনী হিসেবে কায়মনে তাঁর সেবায় নিযুক্ত ছিলেন।

সে নির্বাসিত জীবন যাপনকালে আরবের সেরা ধনীর কন্যা হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁর স্বামীর সঙ্গে থেকে কত যে কষ্ট ও ক্লেশ ভোগ করেছিলেন তা
কল্পনাও করা যায় না ৷ এই সময় একবার একাধারে তিন দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অনাহারে কাটিয়ে দিতে তালহা নামক একপ্রকার বৃক্ষ পত্রের রস ছাড়া মুখে দেয়ার মত কিছুই ছিল না। উহা দিয়েই কোনরূপে জীবন রক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু কি আশ্চার্যজনক ঘটনা ।

এমনি অবস্থার মধ্যেও কোনদিন হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁর স্বামীর সেবায় বিন্দুমাত্র শৈথিল্য প্রদর্শন করেন নাই। উপরন্তু উৎসাহ এবং প্রেরণা দানে ব্যস্ত ছিলেন। আজকাল তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার প্রভাবে ও নারী জাগরণের ডামাডোলে বহু মহিলাই স্বামী সেবাকে দাসীপনা মনে করে ও উহাকে অমর্যাদাকর ও ঘৃণার কাজ বলে ধারণা করে সামান্য কোন অসুবিধা দেখা দিলেই স্বামীর প্রতি রুক্ষ ও কর্কশ বাক্যবাণ প্রয়োগেও এতটুকু দ্বিধা করে না।
নানারূপ কটু বাক্য বলতে আরম্ভ করে দেয় ।

এ শ্রেণীর মহিলাদের অবশ্য হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর কর্ম জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত ।
লক্ষ্য করা উচিত যে, তিনি কত বড় এক ধনবানের কন্যা এবং নিজেও আরবের শ্রেষ্ঠ ধনবতী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও একজন সম্পূর্ণ দাসীর ন্যায় কিভাবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সেবাকে স্বীয় জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন । নারী যদি বুদ্ধিমতী ও সতি-সাধ্বী হয় তা হলে কিছুতেই সংসার সুখের না হয়ে পারে না এবং দাম্পত্য জীবনও মধুর না হয়ে যায় না ।

সতী ও সৎস্বভাবা নারীদের পারিবারিক জীবনকে স্বর্গীয় জীবনে পরিণত করতে কতক্ষণ লাগে?
শুধু তাদের ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে ।
হযরত খাদীজা (রাঃ) সুদীর্ঘ পঁচিশ বৎসর ধরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছিলেন, কিন্তু এ দীর্ঘকালের মধ্যে কোন

একটি দিন তিনি স্বামীর সাথে কোনরূপ মান অভিমান কে বলতে পারবে না ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে যেমন আল্লাহপাক দুনিয়াতে মানব জাতির লক্ষ্যে প্রেরণ করেছিলেন, হযরত খাদীজা (রাঃ)-কেও তেমনি আবার তার সুযোগ্য সঙ্গিনী, সাহায্যকারী, সুখে দুঃখে সম অংশভাপি, বিপদে-আপদে উৎসাহ, উদ্দীপনা, সান্তনা ও প্রবোধদানকারী এবং অন্তরে শক্তি সাহস সঞ্চার করি রূপে তাঁর সঙ্গে জোড়া বেঁধে দিয়েছিলেন।

একটি বিষয় চিন্তা করলে পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, প্রিয় রাসুল (সাঃ) মাত্র পঁচিশ বৎসরের যুবক হয়ে চল্লিশ বছর বয়স্কা পৌঁড়া খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবার পিছনে আল্লাহ পাকই একটা সুস্পষ্ট কারণ করে দিয়েছিলেন।
তা হল, হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এ কেবল মাত্র দাম্পত্য সুখ ভোগই উদ্দেশ্য ছিল না।

উহা তো থাকবেই, কিন্তু উহার সাথে আরও অনেক উদ্দেশ্যই নিহিত ছিল তা আদর্শ স্থানীয়া নারী দিয়েই সাধিত থেকে পারে। হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মাধ্যমে তাই হয়েছে। হযরত খাদীজা (রাঃ) একদিকে যেমন আদর্শ স্থানীয়া স্ত্রীসুলভ ব্যবহার দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মনোরঞ্জন সাধন করতেন।
অন্যদিকে আবার তেমন এক পরম বুদ্ধিমতী ও সুযোগ্য জননীর মত জননীর আসনে বসে মাতৃ-পিতৃহীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সন্তানের ন্যায় তদারক ও প্রতিপালন করেছিলেন।

শুধু প্রাক-ইসলামিক যুগে নয়, রিসালাত লাভের পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন দ্বীন প্রচার শুরু করেন ও তাতে কাকির -কোরাইশকুল রুষ্ট হয়ে তাঁর সাথে চরম শত্রুতা আরম্ভ করে, প্রতি পদক্ষেপে তাঁকে বাঁধা দিতে থাকে তখন সে মহা দুর্যোগ মুহূর্তে হযরত খাদীজা (রাঃ) সত্যিই এক বিচক্ষণা সাহসিকতা ও তেজস্বিনী মাতার ভূমিকা পালন করে স্বামী হযরত মু (সাঃ)-এর লক্ষ্যে অটল থেকে কর্তব্য পালনে প্রেরণা দিয়েছিলেন এবং নানাভাবে তাঁকে মনোবল সুদৃঢ় রাখতে সাহায্য করেছিলেন।

হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁর ধনরাশী সম্পূর্ণ স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এ দান গ্রহণ করার কারণে যেন স্বামী হৃদয় সঙ্কুচিত না হয় এবং কোন রকমের দুর্বলতা সৃষ্টি না হয়, তারজন্যে তিনি স্বামীকে প্রায়ই এরূপ বলতেন, হে আমার স্বামী! আল্লাহর নবী (সাঃ)! আমি তো আপনার এক নগণ্য খাদেম মাত্র।
আমি যে কিছু অর্থ আপনার হাতে দিয়েছি, তাতে যেন এরূপ মনে না করেন যে, ঐ ধন আমার ছিল । আমি আপনাকে দান করে দিয়েছি।

ঐ ধনের প্রকৃত মালিক তো আল্লাহ পাক । আল্লাহর মর্জিতেই উহা আপনার হাতে এসেছে। সুতরাং সে ব্যাপারে আপনার কোন কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন নেই । হযরত খাদীজা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে এ ধরনের ভালবাসা, স্নেহ ও সুসম্পর্ক রক্ষা করে জীবন যাপন করেছিলেন ।

পক্ষান্তরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ও স্ত্রী খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে কেমন আচরণ প্রদর্শন করেছিলেন, তিনি তাঁকে কত অধিক ভালবাসতেন, কি গভীর আকর্ষণ, নির্ভরশীলতা এবং প্রাণের টান ছিল, তার কিছু নমুনা উল্লেখ করছি। এটা এক অতি সত্য কথা যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন প্রকৃত ও বাস্তবতার ধর্ম ইসলামের মহান নবী ।

একদিকে তাঁর চরিত্রে ছিল অলৌকিক বিভিন্ন গুণাবলির সমাবেশ ।
অন্য দিকে ছিলেন তিনি সম্পূর্ণ মানবীয় গুণ ও চরিত্রের অধিকারী। তাঁর আদর্শ ও নীতি ছিল পারিবারিক জীবন যাপনের আদর্শ প্রতীক । তা তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবেই পালন করেছিলেন। তিনি তাঁর উম্মতগণকে শুনিয়েছিলেন- ইসলামে বৈরাগ্যের কোন স্থান নেই ।

মানুষে মানুকে প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা, দয়ামায়া, স্নেহ-সৌহার্দ্য এগুলি তার মধ্যে বিরাজ করে শ্রেষ্ঠ মানবোচিত ভাবেই ।
বিয়েকে তিনি মানব জীবনে বাধ্যতামূলক কার্য হিসেবে নির্দেশ করেছিলেন। বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-প্রীতির সম্পর্ক এবং যৌনাকর্ষণকে তিনি উপেক্ষা করেন নাই; বরং পরিপূর্ণরূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
শুধু স্বীকৃতিই নয়, একে অতি প্রয়োজনীয় বিষয় বলে নির্দেশও করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালবাসা ও সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সেরা আদর্শ পুরুষ।

তিনি স্বীয় স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে গভীর ভাবে ভালবাসতেন ও তাঁর সাথে মধুর আচরণ প্রদর্শন করতেন। তাঁর নিজেরই একটি উক্তি প্রসংগেক্রমে উল্লেখ করা যায়।

একবার তিনি সাহাবীদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, সে পুরুষ লোকই অত্যুত্তম, যে স্বীয় আচরণের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর কাছে উত্তমরূপে বিবেচিত হয়। আমি নিজেও তদ্রূপ বৈকি
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিজের এ উক্তি দিয়েই বুঝা যায় যে, তিনি তাঁর সহধর্মিণীর সাথে কিরূপ উত্তম ব্যবহার করতেন এবং কত বেশি গুরুত্ব প্রদান
করতেন।

তিনি যে স্ত্রী খাদীজা (রাঃ)-কে শুধু ভালই বাসতেন তা নহে। বিভিন্ন ব্যাপারে তিনি হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর উপরে যথেষ্ঠ নির্ভরশীলও ছিলেন 1 পারিবারিক জীবনে হযরত খাদীজা (রাঃ)-ই ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শক্তি, সামর্থ্য, শান্তি, আবাস এবং নিরাপত্তা লাভের একমাত্র নির্ভরস্থল।

যখনই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাহির থেকে কোন সঙ্কট বা সমস্যা লিপ্ত হয়ে চিন্তাক্লিষ্ট বদনে গৃহে প্রত্যাগমন করতেন, তখনই হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁর স্বভাবসুলভ মিষ্টালাপ এবং সান্তনা বাক্য দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মনে নুতন শক্তি ও উদ্যম সৃষ্টি করে তাঁর চিন্তাভাবনা দূর করে দিতেন।

এমন অনেক সময় দেখা গেছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে পুনঃপুনঃ বলতেন, প্রিয়তমা খাদীজা ! তুমি আমার সঙ্গে কথা বল, তুমি আমার সঙ্গে কথা বল । অবস্থা দেখে মনে হত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মুখের সান্তনা বাক্য এবং প্রেরণামূলক উক্তি সমূহ শুনার জন্য খুবই আগ্রহান্বিত হয়ে থাকতেন ।

কখনও কখনও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) গৃহে আগমন করে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে নৈরাশ্যব্যঞ্জক কন্ঠে বলতেন, খাদীজা! আল্লাহ পাক আমার উপরে যে মহা দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা আমি বহন করতে সক্ষম হব কি? 

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাক্য শুনে মনে হত ।
যেন দুনিয়ায় তিনি সর্বাপেক্ষা আপন প্রিয়জন এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছে স্বীয় হৃদয়ের কথা প্রকাশ করে তাঁর নিকট থেকে আশ্বাস এবং উৎসাহব্যঞ্জক জবাব শুনার জন্য অতিশয় ব্যগ্র ও উৎসুক থাকতেন।

হযরত খাদীজা (রাঃ) তখন প্রিয় স্বামীর মস্তক স্বীয় ক্রোড়ে টেনে নিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে বলতেন, প্রিয়তম! আপনাকে আল্লাহ যে উদ্দেশে প্রেরণ করেছেন, তা সাধন করতে তিনিই আপনাকে সহায়তা করবেন। আপনার নৈরাশ্যের কোন কারণ নেই । তিনিই আপনার সর্বপ্রধান সহায় ।
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর এ ধরনের প্রবোধবাক্য শুনে মুহূর্ত মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর হৃদয়ের মধ্যে নুতন আশার আলোক বিকশিত হয়ে উঠত অমিত সাহস এবং নব উদ্যম সৃষ্টি হত ।

হযরত খাদীজা (রাঃ) এ ধরনের আচরণ দিয়ে নবী (সাঃ)-এর হৃদয়ে যে কি পরিমাণ স্থান দখল করেছিলেন তা তাঁর জীবতকালেই বিভিন্ন উক্তি ও কার্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর উহা অনুভব করা গিয়েছে আরও পরিস্কার ভাবে।
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পরলোক গমনের পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কথায় কথায় তাঁর স্মরণ, নামোচ্চারণ. এবং গুণ কীর্তন করতেন ।

কোন কোন সময় তিনি এত বেশি করতেন যে, এটা নিয়ে তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁকে বিদ্রুপ বাক্যবাণও প্রয়োগ করতেন ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর স্মৃতি উল্লেখ করতে গিয়ে প্রায়ই বলতেন, হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর স্মৃতি দিয়ে আমার ও ইসলামের যে উপকার সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না ৷

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দাম্পত্য জীবনের গভীরতার একটি প্রধান প্রমাণ হল তিনি হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে নিয়ে জীবনের দীর্ঘ পঁচিশটি বৎসর অতিবাহিত করেছিলেন, এর বেশির ভাগ সময়ই তিনি পূর্ণ যুবক ছিলেন।

অথচ এ সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন নাই বরং তাঁর তুলনায় যথেষ্ট বেশি বয়সের স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে নিয়েই তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন । জীবনে তিনি বিয়ে অনেকগুলিই করেছিলেন কিন্তু তা সবগুলিই অনুষ্ঠিত হয়েছিল হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ইনতেকালের পরে।