হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 7

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 7

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসার সূচনা

খোয়াইলিদের বার্ধক্য এবং দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল। কন্যা খাদীজা (রাঃ) পুনরায় স্বামী হারা হয়ে বিধবা হলেন, তখন আর তিনি সে অসহনীয় দুঃখের আঘাত সহ্য করতে পারলেন না। তিনি একেবারে ভেঙ্গে পড়লেন এবং শয্যাগত হলেন। পিতার সম্মুখে এভাবে তিন তিন বার কন্যা বিধবা হলে কি ব্যাথা লাগে তা শুধু ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে। অন্য কারও পক্ষে তা বুঝা সম্ভব নয় ।

ভগ্নহৃদয় খোয়াইলিদের জীবনী শক্তি প্রতি মূহূর্তে কম হয়ে আসছিল। এটা তিনি উপলব্ধি করে আর দেরি করা চলে না ভেবে একদা কন্যা হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে নিজের একান্ত কাছে ডেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল দায়িত্ব কন্যার হাতে তুলে দিলেন।

মেয়ের প্রতি পিতার শেষ উপদেশ

বৃদ্ধ খোয়াইলিদ তার দুঃখিনী কন্যা খাদীজা (রাঃ)-এর মনের আঘাত স্বীয় হৃদয়ে অনুভব করে জীবনের শেষ মুহূর্তটিও বড় অশান্তির মধ্যে কাটিয়ে গিয়েছেন। তবু পরম ধৈর্য ও সহ্যশক্তি বলে তিনি মনকে অবিচল রেখেছিলেন।

চরম মুহূর্তটি উপস্থিত হওয়ার আগে একদিন তিনি তার ব্যবসার দায়িত্ব কন্যা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর হাতে তুলে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন, মা খাদীজা! এ জগতে কেহই স্থায়ী হয়ে আসে নি। সকলেরই এখান থেকে বিদায় গ্রহণ করতে হয়। কেহ একদিন আগে, আর কেহ একদিন পরে ।

আমি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি তা তুমি নিজেই দেখতে পাচ্ছ। তদুপরি রোগ-শোকে একেবারেই দুর্বল হয়ে গিয়েছি। দৈহিক ও মানসিক যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে আমার আর বাঁচার আশা নাই স্পষ্টই বুঝতে পার। হয়তো খুব অল্প সময়ই এ দুনিয়াতে আছি
মা খাদীজা! তোমার মনের দুঃখ ও প্রচন্ড আঘাত আমি তোমার পিতা হয়ে না বুঝলে আর কে বুঝবে?

পুরোপুরিভাবেই তোমার মনের বেদনা উপলব্ধি করছি। কিন্তু সব কিছু বুঝেও মানুষের কোন কিছুই করার নেই। আল্লাহ পাকের ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে থাকতে হয়। তোমার ব্যাপারে আমার মন কেবলই কি বলছে জান? প্রভু আল্লাহ পাক শীঘ্রই তোমাকে কোন বিশেষ মর্যাদা দান করবেন এ জন্যই এ
বিপরীত অবস্থাগুলি তিনি ঘটিয়েছেন। 

তোমার পুণ্যময়ী জননী তোমার জন্মের পূর্বেই তোমার সম্পর্কে একটি অত্যাশ্চার্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমার এ কথাও মনে হচ্ছে যে, সে স্বপ্নটি সম্ভবতঃ অনতিবিলম্বেই বাস্তবায়িত হবে।
মা খাদীজা ! 

তুমি এতটুকু বিমর্ষ বা ব্যথিত হইও না। মনকে দৃঢ় রেখে আল্লাহ পাকের গূঢ় রহস্যের প্রতি নির্ভর করে থাক । আর একটি কথা,
আরবের লোকগণ তোমার নির্মল ও উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে তোমাকে তাহেরা উপাধি প্রদান করেছে, তুমি এ ক্ষেত্রে যোগ্যতার সাথে সে ঐতিহ্য রক্ষা করবে। আমি বিশ্বাস করি, তুমি নারী হলেও তা পারবে।

অতঃপর তোমাকে একটি উপদেশ প্রদান করছি, ব্যবসায় লব্ধ অর্থ দিয়ে দরিদ্র পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং সাধারণ গরীব-দুঃখিকে সাহায্য করবে।
এভাবে খাদীজা (রাঃ)-কে অনেক উপদেশ দিতে গিয়ে খোয়াইলিদের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। 

তাই লক্ষ্য করে খাদীজা (রাঃ) তাকে কোমল কন্ঠে অনুরোধ করলেন,
আব্বা! আপনার খুবই কষ্ট হচ্ছে। আপনি এখন একটু বিশ্রাম নিন। আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। শুধু একবার আল্লাহ পাকের কাছে বলে রাখুন যে আপনার খাদীজা যেন তার পিতার উপদেশগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারে ।

খোয়াইলিদের ইনতেকাল

এ ঘটনার সাথে আরেকটি ঘটনার অন্তর্নিহিত যোগসূত্র থাকে বলে অতি সংক্ষেপে সে ঘটনাটিও আলোচনা করা প্রয়োজন ।
তখনও পর্যন্ত হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রথম বিয়ে হয় নি। ঠিক এ সময় একটি খবর মক্কার চারদিকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল যা, সেরা অভিজাত কোরায়েশ গোত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় আবদুল মুত্তালিবের কনিষ্ঠ পুত্র আবদুল্লাহর স্ত্রী আমিনা এমন একটি সর্ব সুলক্ষণযুক্ত পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন ।

যার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ভিতরে ও বাইরে নানারূপ আশ্চার্য নিদর্শনাবলী প্রকাশ পেয়েছে।
তারপর মক্কার এ কোরায়েশ সন্তানকে ঘিরে উক্ত গোত্র এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভিন্ন রকম আলোচনা ও গুণ-প্রসংশার কথা ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল ।
এ সন্তানের পিতা আবদুল্লাহ সন্তান জন্মের কয়েক মাস পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। বিধবা মাতা আমিনার দায়িত্বেই শিশুর লালন-পালন চলছিল । 

কিন্তু আল্লাহ পাকের কি অপূর্ব ইচ্ছা। সন্তানের মাত্র ছয় বৎসর বয়সকালে তার মাতা আমিনাও তাকে পূর্ণ ইয়াতীম করে পরপারে চলে গেলেন ।
তখন তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব দাদা আবদুল মুত্তালিবের উপর পড়ল । কিছুদিন যেতে না যেতে বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবও মৃত্যুবরণ করলেন। তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় পুত্র আবু তালিবের কাছে পিতা-মাতা হারা এ ইয়াতীম ছেলেটিকে আল্লাহকে সাক্ষী করে সোপর্দ করে যান।

এ ছেলেটির নাম রাখা হয়েছিল মুহাম্মদ (সাঃ)। আহমদ নামে তাঁর আর একটি নাম রেখেছিলেন তাঁর মাতা হযরত আমিনা।
আবু তালিব ইয়াতীম ভাতিজাটিকে পুত্রের চেয়ে অধিক স্নেহে প্ৰতিপালন করছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মধ্যে জন্ম ও বাল্য থেকে যে সকল নিদর্শন এবং চরিত্র ও গুণাবলি প্রকাশ পাচ্ছিল, তা দেখে সকলেই মুগ্ধ এবং বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলেন। 

তাঁর বয়স যতই বাড়তে লাগল, সাথে সাথে তাঁর ভিতরকার স্বভাব-চরিত্র এবং আচারণাদিও অধিকতর সৌন্দর্যময় হয়ে উঠল
বিশেষ করে তার সত্য-সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে মুগ্ধ হয়ে আরবের লোকেরা তাঁকে আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত করল । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব আবু তালিব ঠিকই গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু জনৈক প্রধান কোরায়েশ নেতা হওয়া সত্ত্বেও তার সংসারে পূর্ণ স্বচ্ছলতা ছিল না। 

অভাব একরূপ লেগেই থাকত ।
এই কারণে ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা কোনরূপ করতে পারলেও তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার কোন ব্যবস্থা করতে পারলেন না । বরং আবু তালিব ভাতিজাকে সে বয়সেই মাঝে মধ্যে স্বীয় ব্যবসায় সফরের সঙ্গী করতে শুরু করলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এভাবে নিরক্ষর থেকে গেলেন ।

আসন্ন মৃত্যুর ভাবনা মনে নিয়েই অতি বৃদ্ধ খোয়াইলিদ এখন অন্তিম শয্যায় শায়িত। চলা ফেরা করার মত শক্তি এখন আর তাঁর নাই। মাঝে মধ্যে উঠে কিছু সময়ের জন্য বসতেন আর বেশির ভাগ সময়ই শায়িত অবস্থায় থাকতেন এবং শায়িতাবস্থায় আল্লাহর নাম স্মরণ করতেন ।
একদিন তার ভাতিজা ওয়ারাকা ইবনে নওফেল তার শয্যা পার্শ্বে বসে চাচার সাথে কথার্বাতা বলছিলেন। 

পরস্পরের কথাবার্তার ভিতরে হঠাৎ খোয়াইলিদ ভাতিজাকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা নওফেল! বলতো হাশেমী গোত্রের মৃত আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ (সাঃ) নামক ছেলেটি সম্পর্কে তোমার কি ধারনা হয়?

ওয়ারাকা উত্তর দিলেন, চাচা! ধারনার কথা কি বলব, তবে তাঁর জন্মদিনের ঘটনাসমূহ, বিভিন্ন নিদর্শনাদি, তা ছাড়া তাঁর চাল-চলন, আচার-আচরণ এবং অন্যান্য লক্ষণাদি যা প্রত্যক্ষ করেছি তাতে দেখা যায় যে, এগুলো আমাদের কিতাবের বর্ণনার সাথে হুবহু মিলে যায়। তবে যেহেতু সে এখনও পূর্ণ বয়ঃপ্রাপ্ত হয় নি। তাই সঠিক কোন মন্তব্য করা যায় না ।

ভাতিজার কথা শেষ হলে খোয়াইলিদ বললেন, তার সম্পর্কে যে সব কথা আমার কর্নগোচর হয়েছে। অতঃপর তুমি যা কথা বললে, তাতে আমার কি মনে হয় জান? এ মুহাম্মদ নামক বালকটির মাঝে শেষ নবী লুকায়িত রয়েছেন ।

এ সময় খাদীজা (রাঃ) সেখানে এসে পড়লেন। খোয়াইলিদ তার কথা বলেই চলছেন। হঠাৎ বললেন, ওয়ারাকা! মনে একটা দারুন দুঃখ বয়ে গেল। শেষ যমানার নবীকে দেখেও যেতে পারলাম না। আমার মনের দৃঢ় ধারণা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মধ্যেই নিশ্চয়ই আল্লাহর নবুয়ত নির্ধারিত আছে।

অচিরেই যথা সময়ে উহা আত্মপ্রকাশ করবে। আমার তো সময় উপস্থিত । এখনই তোমাদের নিকট থেকে বিদায় গ্রহণ করব। তোমাদের কে বলে গেলাম যে, তোমরা আখেরী নবীর কাছে আমার পক্ষ থেকে সালাম আরজ করিও। আর তোমাদের প্রতি আমার নসিহত হল, তিনি যা বলবেন, বিনা দ্বিধায় তোমরা তা মেনে নিও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে আবার বললেন, খাদীজা ! যা বললাম, শুনলে তো।

এ কথা বলেই তিনি নীরব হয়ে গেলেন। মনে হল, তিনি যেন ধীরে ধীরে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ছেন। একটু পরেই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল তার নাসিকাগ্রে হস্ত রেখে দেখলেন, শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে না। তিনি বলে উঠলেন, খাদীজা ! চাচাজী বোধ হয় আমাদের ফেলে চলে গেছেন। হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর দু'চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল ।

ব্যবসায়ী হযরত খাদীজা (রাঃ)

হযরত খাদীজা (রাঃ) তৃতীয়বার বৈধব্যের স্বীকার হয়ে যখন পিতৃগৃহে ফিরে আসলেন, খোয়াইলিদ তখন নিজের বার্দ্ধক্য দুর্বলতাজনিত কারণে তার
ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব কন্যা খাদীজা (রাঃ)-এর হাতেই ন্যস্ত করেছিলেন। এর আরও একটি বিশেষ কারণ ছিল। তা হল যদি হযরত খাদীজা (রাঃ) পিতার বিরাট ব্যবসার ভার নিজ হাতে নিয়ে দিবারাত্র ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে পারেন তা হলে তার মনের বেদনা ও আঘাত তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। 

যেহেতু ব্যবসায়িক ঝামেলায় অন্তরে শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা ছাড়া অন্য কোন চিন্তা-ভাবনা উদয় হবে না। খোয়াইলিদের ঐ উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ সফলই হয়েছিল। খাদীজা (রাঃ) ব্যবসার দায়িত্বভার পিতার নিকট থেকে লাভ করে অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে পরিচালনা শুরু করলেন।
পিতা খোয়াইলিদ তা স্বচক্ষে দেখে পুরাপুরিভাবেই বুঝে গেলেন যে, কন্যা খাদীজা (রাঃ) নিজেই ব্যবসায়ের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হবেন ।

পিতার মৃত্যুর পর খাদীজা (রাঃ) নিজেই ব্যবসায়ের মালিক হয়ে পড়লেন । এতদিন তিনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন পিতা খোয়াইলিদের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু এখন ব্যবসার মূল কর্তৃত্বই তাঁর । তিনিই এখন এর পূর্ণ অধিকারী। এবার খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায় পিতা খোয়াইলিদের ব্যবসা অপেক্ষাও ব্যাপকতর হল। কারণ পিতার সম্পদের সঙ্গে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত দু’স্বামীর পরিত্যাক্ত যে সম্পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন তা মিলিত করায় মূলধনের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেল ।

ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর অপূর্ব যোগ্যতা ও সাফল্যের কতগুলি বাস্তব কারণ ছিল যেমন-তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা ছিল অত্যন্ত প্রখর আর কর্মশক্তি ও বিচক্ষণতার প্রাচুর্য্য তার মধ্যে স্থান লাভ করছিল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসূলভ আর প্রাচুর্যতার মধ্যে দিয়ে ।

যেমন পিতা খোয়াইলিদের এতবড় ব্যবসা পরিচালনার রীতি-নীতি ও নৈপুন্য তিনি ছোটবেলা থেকে দেখে পিতার যোগ্যতা, গুণাবলি ও পারদর্শিতা সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেছিলেন। সুতরাং পিতার ব্যবসা নিজ হাতে নিয়ে তিনি তা পিতার রীতি- নীতিতেই চালাতে লাগলেন ।
পিতার ব্যবসা দেশে-বিদেশে সর্বস্থানেই বিস্তৃত ছিল। শাম, সিরিয়া, ইয়ামেন, বসরা, প্রভৃতি দেশে তার ব্যবসা চলছিল অত্যন্ত ব্যাপকভাবে। 

খোয়াই-লিদের বেতনভূক্ত লোকদের দিয়েই এ ব্যবসা চালান হত, মাঝে মধ্যে খোয়াইলিদ নিজেও উল্লেখিত দেশসমূহে গিয়ে ব্যবসা তদারক করে আসতেন।
হযরত খাদীজা (রাঃ) একজন সম্ভ্রমশীলা মহিলা হওয়াতে প্রত্যক্ষ তদারকীতে বৈদেশিক বানিজ্য চালিয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হল ।
তবে খাদীজা (রাঃ) তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দ্রুত সে সমস্যার সমাধান করলেন। তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত ও সক্রিয় আত্মীয়কে ব্যবসায় নিযুক্ত
করলেন।

বৈদেশিক বাণিজ্য দেখা-শুনার দায়িত্ব তাদের উপর ন্যাস্ত হল। এভাবে স্বাচ্ছন্দ্য ও অনাবিল গতিতে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসা চলতে লাগল । হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসার বিস্তার ক্রমশঃই প্রসারিত হওয়ায় ব্যবসায় কর্মচারির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দিল ।
যোগ্য কর্মচারীবৃন্দের সততা ও কর্মদক্ষতার ফল খাদীজা (রাঃ) অচিরেই পেতে শুরু করলেন।

আর এরূপ শুধু ব্যবস্থাপনা এবং নিখুঁতভাবে ব্যবসা চলতে থাকায় অল্প দিনেই শাম, সিরিয়া, ইয়ামেন প্রভৃতি দেশগুলোতে এক অতি বিচক্ষণ ব্যবসায়ী হিসেবে খাদীজা (রাঃ)-এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল সকল কর্মচারিদের প্রতি হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর সাধারণ নির্দেশ ছিল, কোন ক্ষেত্রে কারও সাথে কোনরূপ প্রতারণা করবে না। সব সময়, সকল ক্ষেত্রে সততা রক্ষা করবে। 

অতিলোভী ব্যবসায়ীগণ এ সব পন্থায় অধিক লাভ অর্জন করলেও তাদের সুনাম হয় না; বরং অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ন হয়ে যায় । ব্যবসার ক্ষেত্রে খাদীজা (রাঃ) কতগুলি নীতি রক্ষা করে চলতেন। যেমন, খুব বেশি লাভের লালসা না করা, অল্পলাভে পণ্য বিক্রি করা, অধিক ক্রেতা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, ক্রেতার কাছে মালের দোষত্রুটি গোপণ না করা, নির্ভেজাল মালের সাথে ভেজাল মাল মিশিয়ে না দেয়া, ক্রেতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং সর্বোপরি সততা রক্ষা রা।

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর কর্মচারিগণ তাঁর এ মূলনীতিসমূহ যথাযথভাবে পালন করতেন ।
যার ফলে ব্যবসায়ের প্রতিযোগীতায় খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে কেহই কুলিয়ে উঠতে পারত না ।
এ কারণেই ব্যবসায়ী মহলে তাঁর আসন সবার উপরে স্থাপিত হল । ধনী হিসেবেও তার স্থান সবার উপর নির্ধারিত হল ।

আরবে তখন সাধারণতঃ দুটি নিয়মেই ব্যবসা প্রচলিত ছিল । একটি নিয়ম হল মহাজনগণ বেতনভোগী লোকদের দিয়ে ব্যবসা করত। কর্মচারিদের বেতন দেয়া হত এবং ব্যবসায় যা লাভ হত, তা মহাজনই ভোগ করত।
আর অন্য নিয়ম ছিল যে, মহাজনগণ মূলধনহীন লোককে মূলধন বাবত নগদ অর্থ দিত। 

এ অর্থ দাতা এবং গ্রহিতার মধ্যে লাভের একটা অংশ নির্দিষ্ট হারে বণ্টিত হত।
গ্রহিতা মহাজনের নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করে সে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজে কিংবা কর্মচারী নিয়োগ করে ব্যবসা চালাত। ব্যবসার টাকার ব্যাপারে মহাজনের কোনরূপ হাত থাকত না ।