হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 6

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 6

খাদিজা (রাঃ)-এর প্রথম বিবাহ

খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন অসংখ্য গুণে গুণবতী। তাঁর রূপ, চারিত্রিক গুণাবলীর কথা অল্পদিনের মধ্যে আরবের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছিল । আজ খাদিজা যৌবনে পদার্পণ করেছেন । তাঁর দেহের প্রতটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। রূপ যৌবন প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় বিকশিত হচ্ছে। 

তৎকালীন আরবের অধিবাসীরা বংশ মর্যাদাকে বেশী গুরুত্ব দিত । 
বংশ মর্যাদায় তখন কুরাইশরাই ছিল সর্বপ্রধান। বংশ মর্যাদার দিক দিয়ে হযরত খাদিজা (রাঃ) ছিলেন শীর্ষস্থানীয় । 

কারণ তাঁর মা এবং বাবা উভয়ই ছিলেন কোরাইশ বংশের। রূপ, গুণ আর বংশ মর্যাদা ছাড়া খাদিজার আর একটি প্রধান দিক ছিল, সে ছিল মক্কার ধনী ব্যবসায়ী খুওয়াইলীদের কন্যা। সুতরাং বিবি খাদিজার জন্য চারিদিক থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে লাগল । যোগ্য, অযোগ্য, ভাল, মন্দ, বিভিন্ন স্থান থেকেই খাদিজার বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগল। 

মক্কায় তখন বিভিন্ন শ্রেণীর লোক বাস করত । যেমন খৃস্টান, অগ্নি উপাসক, ইহুদী, নাছারা আরো অনেক। সর্বদিক থেকে প্রস্তাব আসতে লাগল । এত বিবাহ প্রস্তাব কোনকালে কোন পাত্রীর জন্য এসেছে কিনা তা সন্দেহের ব্যাপার। কিন্তু খাদিজার পিতা এবং মাতা ছিলেন জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে অত্যন্ত বিচক্ষণ। সুতরাং কোন লোভে প্রলুব্ধ হবার মত চরিত্র তাঁদের ছিল না । 

সুতরাং বিবাহ প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে প্রত্যক্ষ করলেন এবং একে একে সবগুলো প্রস্তাবই নাকচ করে দিলেন। অবশেষে খুওয়াইলিদ সম্ভ্রান্ত ঘরের একজন বুদ্ধিমান সুদর্শন ও চরিত্রবান যুবককে তাঁর কন্যার বিবাহের জন্য বেছে নিলেন এবং অত্যন্ত ধুমধামের মধ্যে দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন হল। 

বিবাহ উত্তর বিবি খাদিজা তাঁর স্বামী আবু হাওলাকে নিয়ে অত্যন্ত সুখে দিন কাটাচ্ছিলেন কিন্তু বিধাতার আমোঘ বিধান কারো বোঝার সাধ্য নেই। 
বিবি খাদিজার সুখ বেশীদিন টিকল না। 

বিবাহের মাত্র কয়েক বছরের মধ্য আবু হাওলা স্ত্রী খাদিজাকে ছেড়ে ইহকালের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। বিবি খাদিজা বিধবা হলেন । কথিত আছে আবু হাওলার ঘরে বিবি খাদিজার দু'টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। অতঃপর অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা পিতার গৃহে চলে আসলেন ।

খাদিজা (রাঃ)-এর দ্বিতীয় বিবাহ

প্রথমবার বিধবা হয়ে খাদিজা পিতার গৃহে চলে আসলেন। খাদিজা বিধবা হলেও তাঁর রূপ, গুণ, বংশ মর্যাদার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে শুরু হল । খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর মত মেয়েকে বিয়ে করার জন্য অনেকেই পাণি প্রার্থী হলেন । মূলতঃ খাদিজাকে পত্নীরূপে লাভ করা আরবের যে কোন লোকের জন্য গৌরবের বিষয় ছিল । 

খাদিজার পিতার একদিকে ছিল অঢেল সম্পত্তি অন্যদিকে ছিল সামাজিক মর্যাদা। 
সুতরাং অনেকেই এ সুযোগ ছাড়া করতে চাইলেন না। কিন্তু এবারও খুওায়াইলিদ আগের মত নিজের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে পাত্র নির্বাচন করলেন। 

এবার তিনি খাদিজাকে আতিক ইবনে আয়েদ নামে সম্ভ্রান্ত ঘরের এক যুবকের সাথে বিয়ে দিলেন
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা এই ঘরে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। তাঁদের সংসার সুখের মধ্যেই কাটছিল । কিন্তু এবারও তাদের সুখ স্থায়ী হল না । অল্পদিনের মধ্যে আতিক ইবনে আয়েদও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। খাদিজা আবার বিধবা হলেন এবং পিতার গৃহে পুনরায় চলে গেলেন ।

খাদিজা (রাঃ)-এর তৃতীয় বিবাহ

পরপর দু'বার বিধবা হয়ে ফিরে এসে বিবি খাদিজা অত্যন্ত মর্মাহত হলেন । তার দু'জন স্বামীই অবশ্য বিবাহের অল্প কিছুদিনের মধ্য মারা গিয়েছিলেন । তাই খাদিজার যৌবনের তখনও কোন কমতি ছিল না। তাঁর সৌন্দর্যও পূর্বের অবস্থায় ছিল । 

পিতা খুওয়াইলিদ ছিলেন মক্কার ধনী লোক তাছাড়া প্রথম দু'টি বিয়েতেও খাদিজার প্রচুর ধন-সম্পত্তি, হয়েছিল কারণ তাঁর উভয় স্বামীই অগাধ ধন সম্পত্তির মালিক ছিলেন। 
সুতরাং তাঁদের সমস্ত ধন সম্পত্তির মালিক হলেন হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। 

সুতরাং খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা- এর কদর পূর্বাপেক্ষা বহুগুণ বেড়ে গেল। বহু যুবক এবারও খাদিজার পানি প্রার্থী হলেন। পূর্বে যেসব সৎ পাত্র প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তারা এবারও কেউ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইলেন না। কিন্তু খুওয়াইলিদ তাঁর কন্যার দু'বার বিধবা হওয়ায় অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং তিনি পুনরায় কন্যাকে পাত্রস্থ করার ব্যাপারে রাজি ছিলেন না। 

যতই প্রস্তাব আসতে লাগল, তিনি নির্বিকার ভূমিকা পালন করতে লাগলেন এমতাবস্থায় খুওয়ালিদের আত্মীয় স্বজনরা তাঁকে রাজী করাবার জন্য পিড়াপিড়ী করতে লাগলেন। খুওয়াইলীদ এবার রাজী হলেন এবং পাত্র নির্বাচনের জন্য মনোযোগ দিলেন। এ সময় একটি প্রস্তাব তার ভাইয়ের ছেলে সাইদী ইবনে উমাইয়ার নিকট থেকে উঠেছিল। সাইদীও ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন। 

জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেচনায় তিনিও ছিলেন সবদিক দিয়ে উত্তম। খুওয়াইলিদ এবার আপন ভাইয়ের ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করলেন। বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বামীগৃহে চলে গেলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার রহস্য বুঝা বড়ই মুস্কিল। বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সাইদীও ইহকাল ত্যাগ করলেন। 

বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা আবার পিতার গৃহে চলে গেলেন। কতিপয় ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে প্রথম দু'জন যুবকের বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু খুওয়াইলিদের ভাইয়ের পুত্র সাইদী ইবনে উমাইয়ার সাথে কোন বিবাহ হয়নি।

খাদিজার (রাঃ) বিধবা হবার রহস্য

বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর বারবার বিধবা হবার পেছনে যে গূঢ় রহস্য ছিল তা মহান আল্লাহ তা'আলা পরবর্তীতে প্রমাণ করেছেন তাঁকে উন্মূল মু'মিনীন তথা মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করে। বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা সাধারণ রমণী ছিলেন না। মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁকে পৃথিবীতে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। 

তিনিই হবেন ইসলামের দ্বার রক্ষক, তাঁর অর্থের দ্বারা উপকৃত হবেন গরীব দুঃখী মুসলমানগণ । যিনি হবেন সারা জাহানের শ্রেষ্ঠ নবী, আখেরী নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম-এর প্রিয় সহধর্মিণী। তাঁর মাধ্যমেই নবীর বংশ তথা মুসলিম জাহানের বংশ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং তাঁর পক্ষে কি সম্ভব সাধারণ মানুষের সঙ্গে জীবন যাপন করা। 

এখানেই সৃষ্টিকর্তার মূল রহস্য লুকায়িত। আল্লাহর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর কারো হাত নেই এবং লীলা খেলা বোঝার মতও কারো শক্তি নেই। যে খাদিজাকে তিনি বারবার বিধবা করে দুঃখ দিয়েছিলেন তাঁকেই আবার শুধু ইহকালের নয় পরকালের শ্রেষ্ঠ রমনীর মর্যাদা দিয়েছেন।