হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 9

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 9

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায়ে নিযুক্তি

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায়ের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃতি লাভ করছিল। তাঁর বহির্বাণিজ্য আগের চেয়ে আরও ব্যাপকাকার ধারণ করল।
তাই তাঁর বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ যোগ্য এবং সৎ ব্যক্তির প্রয়োজন দেখা দিল। এজন্য তিনি যোগ্যতা সম্পন্ন লোকের সন্ধান করছিলেন। 

ঠিক এমনি সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ব্যবসায়িক সুনাম তাঁর কানে গিয়ে পৌঁছল। তাঁর সচ্চরিত্র এবং বিশ্বস্ততার জন্য তিনি ইতোপূর্বে আল আমীন উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন এ খবরও হযরত খাদীজা (রাঃ) জানতেন ।
অতএব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই যে তাঁর কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি, তা বুঝে নিতে তাঁর আর বাকী থাকল না।

সুতরাং যদি সম্ভব হয়, তবে বৈদেশিক ব্যবসায়িক কাজ তাঁকে দিয়ে পূর্ণ করতেই তিনি মনস্থ করলেন।
বিলম্ব করে কোন লাভ নেই, তাই শীঘ্রই তিনি একটি লোককে উপরোক্ত প্রস্তাব দিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করলেন।
একটি বর্ণনায় দেখা যায় যে, হযরত খাদীজা (রাঃ) স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্রী ফাতিমা (রাঃ) কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট প্রস্তাব দিয়ে প্রেরণ করলেন।

তিনি যদি হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রস্তাব অনুয়ায়ী কার্যভার গ্রহণ করেন, তা হলে এ জাতীয় কার্যে নিযুক্ত অন্যান্য লোক যে পারিশ্রমিক বা লাভ্যাংশ পায় তাঁকে তিনি তার চেয়েও দ্বিগুণ দিতে প্রস্তুত আছেন ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অভিভাবক ছিলেন আবু তালিব। তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কাজই তিনি করতেন না। 

তাই তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবকে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর এ প্রস্তাবের কথা অবহিত করলেন।
আবু তালিব হযরত খাদীজা (রাঃ) এবং তাঁর ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে জানতেন। সুতরাং তিনি সন্তুষ্ট চিত্তে ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে সম্মতি দান করলেন। চাচার অনুমতি পেয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অবিলম্বে উক্ত কাজে যোগদান করলেন ।

ব্যবসার জন্যে বিদেশ যাত্রা

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায় নিযুক্ত হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বপ্রথম ব্যবসায়ী গণা নিয়ে শাম দেশ অভিমুখে রওয়ানা করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে হযরত খাদীজা (রাঃ) আরও দু'জন লোক দিয়ে দিলেন। তাদের একজন ছিল হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রবীন ও বিশ্বস্ত গোলাম মাইসারা। গন্তব্য স্থলে পৌছার সাথে সাথেই তাদের মাল বিক্রি হয়ে গেল। এ সফরে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায়ে লাভ হল অনেক বেশি ।

বাণিজ্য যাত্রায় শাম দেশে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কেন্দ্র করে কিছু ঘটনা ঘটল। যার বর্ণনা নিম্নে দেয়া হল ।
শুকনা গাছ সবুজ হয়ে যাওয়া, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ব্যবসায়ী কাফেলা শাম দেশে পৌঁছে যে জায়গায় তাবু স্থাপন করল, তার নিকটেই খৃষ্টানদের একটি মন্দির ছিল। নাস্তুরা নামক একজন বিজ্ঞ খৃস্টান ধর্মজাযক ঐ মন্দিরে অবস্থান করত। 

এখানে তাবু স্থাপন করার পর এক সময় কাফেলার নেতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘটনাক্রমে নিকটস্থ একটি বৃক্ষের মূলে গিয়ে বসলেন। ঐ বৃক্ষটি বেশ কিছুদিন পর্যন্ত পত্রপল্লবহীন অবস্থায় ছিল। তার ডালপালাগুলোও শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাকের কুদরতের কি অপূর্ব মহিমা। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বৃক্ষটির মূলে বসামাত্রই তার শাখা-প্রশাখাগুলো তাজা হয়ে উঠল এবং তাতে পত্র-পল্লব গজাল ধর্মযাজক নাতুরা মন্দিরে বসেই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন। 

তিনি পরম বিস্ময়ে ভাবতে লাগলেন যে, এ ঘটনাত এ লোকটির দিয়ে সংঘটিত হয়েছে। তা ছাড়া এমন ঘটনা আর কিসে থেকে পারে! তার মনে একটি বিরাট প্রশ্ন দেখা দিল যে, তবে এ লোকটি কে? মন্দির হতে বের হয়ে তিনি বিদেশী কাফেলার তাবুর নিকট উপস্থিত হয়ে ভৃত্য মাইসারার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বলুনতো, ঐ গাছের মূলে উপবিষ্ট আপনাদের ঐ লোকটির নাম কি?

মাইসারা তাঁর নাম-পরিচয় সংক্ষেপে বর্ণনা করলেন। নাড়ুরার মনে হল যে, নবীর কারামত ছাড়া এরূপ ঘটনা কিছুতেই ঘটতে পারে না। তিনি মনের উৎসাহ দমন করতে না পেরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট গমন করলেন এবং সেখানে গিয়ে তাঁকে বললেন, হে অপরিচিত ব্যক্তি ! অমুক দেবতার শপথ ! 

আপনার নাম-পরিচয়টা প্রকাশ করুন শুনি
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উত্তর দিলেন, আপনার সর্বনাশ হোক। মানুষ কোন দেবতার নামে শপথ করলে আমার মনে যে অসহ্য দুঃখ লাগে ততটা দুঃখ অন্য কিছুতেই লাগে না ।

বার বছর বয়সের সময় যখন একবার তিনি চাচা আবু তালিবের সাথে শাম দেশে গিয়েছিলেন, তখন বুহাইরা নামক একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও তাঁকে দেখে এরূপ শপথ করেছিলেন। হযরত মুহামদ (সাঃ) তখনও এরূপ উত্তর দিয়েছিলেন।
নাস্তুরা নিজের নিকট রক্ষিত প্রচীন ধর্মগ্রন্থ খুলে তাতে আখেরী নবীর আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, তাঁর সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিদর্শনসমূহ ভালভাবে মিলিয়ে দেখলেন। 

অতঃপর তিনি আনন্দে বলে উঠলেন, আল্লাহর কি মহিমা! নবী যীশু খ্রীস্টের উপর ইঞ্জিল নাযিলকারী মহাপ্রভুর শপথ করে বলছি, এ লোক অবশ্যই তিনি ।
উপস্থিত লোকজন নাস্তুরার এ ধরণের মন্তব্যের কোন অর্থ বুঝতে না পেরে বলল, জনাব! 

আপনি এ কথাটি কি বললেন, আমরা বুঝতে পারলাম না। খুলে বলুন। নাস্তরা বললেন, তোমাদের সাথী এ লোকের মধ্যে প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থের ইঙ্গিত অনুযায়ী সর্বশেষ নবীর নিদর্শনসমূহ দেখা যায় । অতএব, আমার ধারণা মতে এ লোকটিই শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

পাখির ছায়াদান

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার বাণিজ্য কাফেলাসহ যে পথ দিয়ে শাম যাত্রা করছিলেন মরুপথে রোদ্রের প্রচন্ড তাপে যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। যাত্রীরা দুর্বিসহ রৌদ্রতাপে অধিক শ্রান্ত এবং কাতর হয়ে পড়ত , কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অপূর্ব কুদরতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণিজ্য কাফেলাটি ঐপথ দিয়ে চলার সময় দেখা গেল যে, তাদের মাথার উপর একটি বিশাল ছায়া বিরাজ করে যেন তাদেরকে রৌদ্রের তাপ থেকে আড়াল করে সাথে সাথে চলছে। 
এতে কাফেলার লোকগণ বিস্ময়ে অবাক হয়ে উর্ধপানে তাকিয়ে দেখল, দু'টি বৃহৎ আকৃতির পাখি বিরাট পাখা বিস্তার করে তাদের মাথার উপর অবস্থান করে ধীরে ধীরে তাদের সাথে চলছে। এ আশ্চার্য ঘটনা দেখে তাদের আর বুঝতে বাকী রইল না যে, কাফেলার নেতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তারপর যখন কাফেলা গন্তব্যে গিয়ে তাবু স্থাপন করল, তখন পাখি দু'টি যেন হঠাৎ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল।

শাম দেশে পণ্য বিক্রি শেষ করে স্বদেশে বিক্রিযোগ্য পণ্য শাম থেকে ক্রয় করে পুনরায় যখন কাফেলা দেশের দিকে রওয়ানা হয়, তখনও পথে পূর্বের মত সে একই অবস্থা সংঘটিত হল। এ আশ্চার্য ঘটনায় কাফেলার লোকগণ সকলেই মনে করল যে, তাদের ব্যবসায়ী কাফেলার নেতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিশ্চয়
কোন সাধারণ লোক নন।

অবশ্যই তাঁর উপর মহা প্রভু আল্লাহর রহমত রয়েছে। সুতরাং কাফেলার লোকগণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অত্যন্ত ভক্ত ও আকৃষ্ট হয়ে পড়ল এবং তাঁর প্রতি তাঁদের অন্তর শ্রদ্ধায় একবারে পরিপূর্ণ হয়ে গেল ।

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন 

শাম দেশ থেকে প্রত্যাগত বাণিজ্য কাফেলা এবার যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে ফিরেছে, হযরত খাদীজা (রাঃ) বৈদেশিক বাণিজ্যে এবারের সফরের মত কোন দিনই এ পরিমাণ মুনাফার মুখ দেখেন নি।

অথচ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর স্বভাবসুলভ সততা রক্ষা করে শুধু নিজের অতুলনীয় কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার বলেই তা করতে সক্ষম হয়েছেন।
হযরত খাদীজা (রাঃ) খুযাইমা এবং মাইসারার নিকট রাস্তার সকল ঘটনা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।

বিশেষতঃ খুযাইমা এবং মাইসারার মুখে সফরের পথে ও শামে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কিত অলৌকিক ঘটনাগুলি শুনে তার মন যেন অধিক পুলকিত হয়ে উঠল।
তাঁর অন্তর জুড়ে কেমন যেন এক আনন্দের বান প্রবাহিত হতে চলল।

এমন সুযোগ্য ব্যক্তি যে আল্লাহ তাঁর ব্যবসায়ের জন্য মিলিয়ে দিয়েছেন, এজন্য তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে বার বার শোকর আদায় করতে লাগলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এখন ব্যবসা পণ্য নিয়ে শাম, সিরিয়া, বসরা, ইয়ামেন প্রভৃতি দেশে সফর শুরু করলেন এবং প্রতিবারই তিনি ধারণাতীত মুনাফা করে আসবেন। তবে তিনি ফিরে শুধু মুনাফা করেই আসবেন শুধু তাই নয়। 

ব্যবসায় ক্ষেত্রে খরিদ্দার ও বিক্রেতাদের সাথে বিশ্বস্ততা, সততা ও ন্যায়নীতি প্রদর্শন করে তাদের মনও জয় করেছেন।
কেহ তাঁর ব্যবহার ও আচরণে কোনরূপ প্রতারণা বা ছল-চাতুরীর পরিচয় পায়। তা ছাড়া সবার সঙ্গে তাঁর অমায়িক ও মধুর ব্যবহার মানুষকে একেবারে মুগ্ধ করে ফেলেছে। এ সব কারণেই তাঁর ব্যবসায়ে অনুকূল অবস্থা এবং অধিক মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উল্লেখিত গুণাবলিগুলোই যে খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসাকে দৈনন্দিন অধিকতর উন্নতির পথে অগ্রসর করে চলছে হযরত খাদীজা (রাঃ) তার সম্পূর্ণই খবর রাখছেন। ব্যবসার উন্নতিতে তার সম্পদের প্রাচুর্য এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। হযরত খাদীজা (রাঃ) খুশি ও তৃপ্তির আনন্দে খুবই উৎফুর। গরীব-দুঃখীকে দান করার অভ্যাস তার পূর্ব থেকেই ছিল কিন্তু মনের আনন্দে এখন তা আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। 

দুঃখী-দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত পাড়া-প্রতিবেশীকে এখন তিনি মুক্ত হস্তে দান করেন এবং ान সৃষ্টিকর্তার গুণ কীর্তন ও নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হযরত খাদীজা (রাঃ) এখন যেন কেমন একটা নতুন তৃপ্তির আনন্দে সর্বাপেক্ষা বেশি সুখী। তাঁর মত সুখী অন্য কেহ নেই। একদিকে তিনি যেমন মান সম্মান, গৌরব ও ধন-সম্পদে আরবের বুকে অতুলনীয়া, অপরদিকে মানষিক খুশি ও তৃপ্তি লাভের ক্ষেত্রেও সবার শীর্ষে।

হযরত খাদীজা (রাঃ) বেশ কিছুদিন ধরে এ অবস্থার মধ্যেই অতিবাহিত করছিলেন। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টি রহস্য একেবারেই দুর্জেয়। তাঁর কণামাত্র উপলব্ধি করার সাধ্য কারও নেই। আল্লাহপাক মানুষকে হৃদয় নামের যে বস্তুটি দান করেছেন, তাঁর রীতি-নীতি-ধারা বড়ই বিচিত্র। 

সহসা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মনের একমুখী ধারা তাঁর নিজেরই অজানা কারণে এ অবস্থা ঘটল, কি জন্য হঠাৎ তার এত সুখ-সম্পদ-ঐশ্বর্য্য তাঁর নিকট মূল্যহীন হয়ে তিনি এমন তৃপ্তির শিকারে পরিণত হলেন।

অনেক ভেবে চিন্তে তিনি এর কোন সন্ধান পেলেন না। তাঁর হৃদয়ের শাস্তি যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে। তবে তাঁর কি হল। তিনি তো একেবারেই পুতঃ পবিত্রা, পাথিব কোন মোহ-মায়া, কোনরূপ ইন্দিয় সেবার পাপ আকাংখার পেশ মাত্র কোনদিনও তাঁর হৃদয়ে ছিল না বা এখনও নেই। তবে কি হল তাঁর? এটা সৃষ্টিকতার এক অদ্ভুদ দুৰ্জ্জেয় লীলা ।

এটা মানব বুদ্ধির অগোচরে । আল্লাহপাক যেভাবে তাঁর লীলা-খেলা চালিয়ে যান, অক্ষম দুর্বল মানুষ সে ভাবেই তাতে ঘুর পাক খেতে থাকে। এ চিরন্তন রীতি আল্লাহ পাকই নির্ধারণ করেছেন। এতে মানব জ্ঞানে কোন দখল বা অধিকার নেই। হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে আল্লাহ দান করবেন সমগ্র মুসলিম জাহানের মাতার মর্যাদা। 

উম্মাহাতুল মু'মিনীন তথা রাসূলে করীম (সাঃ)-এর সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান স্ত্রীর আসন তাঁকে তো সে পথে যেভাবেই হোক না কেন ঘুরে-ফিরে অগ্রসর হতেই হবে। সে অগ্রগমনকে বাধা দিতে পারে এমন সাধ্য কারও নেই? আল্লাহপাকের লিখা ভাগ্যলিপিকে কেহ কোন দিনই খন্ডন করতে সক্ষম হবে না।
সুতরাং হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মানসিক অবস্থা তাঁর এরূপ ধারণ করা একান্তই অনিবার্য ।

তিনি এখন বড়ই উৎকণ্ঠিতা, উতালা এবং অশান্তির মধ্যে আছেন । তাঁর মনে শুধু এ কথাটিই বার বার জাগছে- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে এখনও কেন প্রত্যাবর্তন করছে না? একেকটি দিন এখন তার নিকট অতিশয় দীর্ঘ মনে হয় ।
প্রতিদিনই তিনি এ ধারণা পোষণ করতেন যে, আজ হয়ত সিরিয়ার বাণিজ্য কাফেলা প্রত্যাবর্তন করবে।

মনের এ উদ্বেগ দমন করতে না পেরে তিনি পারিবারিক কাজের ভিতর দিয়েও বার বার মরুপথের দূর দিগন্তে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকতেন ।
তিনি একদিন উক্তরূপে সুদূর পথের দিকে অপলক নেত্রে চেয়ে থাকতে থাকতে দু'চোখ বেদনাত করে ফেললেন ।
হঠাৎ তাঁর দৃষ্টিতে ভেসে উঠল, অনেক দূরে যেন একটি কাফেলার মত দেখা যায় । ক্রমেই তা এগিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

তিনি নিজের মনকেই প্রশ্ন করলেন, এ কাফেলাটিই কি তাঁর সে প্রেরিত সিরিয়া থেকে প্রত্যাগত কাফেলা?
মনেই জবাব দেন, তাই যেন হয় ।
কাপড়ের আচলে চক্ষুদ্বয় মুছে পুনরায় তিনি ভালভাবে নিরিক্ষণ করে দেখলেন, হ্যাঁ তাই তো।

এতক্ষণে কাফেলাটি বেশ কিছুদূর এগিয়ে এসেছে। তিনি আর চক্ষু ফিরাতে পারলেন না ।
একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন এবং দেখতে পেলেন, কাফেলার লোকজন পরিস্কারভাবে চেনাযাচ্ছিল। হযরত খাদীজা (রাঃ) এবার দেখতে পেলেন, কাফেলার মধ্যে উটের পিঠে সুদর্শন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উপবিষ্ট রয়েছেন, এ দৃশ্য অবলোকন করে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর নেত্রদ্বয় শীতল হয়ে গেল ও সমস্ত অন্তর জুড়ে যেন আনন্দের ঢেউ খেলতে লাগল ।

কিছুক্ষণ পরই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কাফেলাসহ হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর গৃহ প্রাঙ্গনে উপস্থিত হলেন ।
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর উতালা হৃদয়ে যেন শত আনন্দের বান এক সাথে প্রবাহিত হল ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবারও ব্যবসায় অত্যন্ত লাভবান হয়ে ফিরে এসেছেন।

হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁকে নিয়মিত অংশ প্রদান করে পারিতোষিক হিসেবে আরও বেশ কিছু অতিরিক্ত দিয়ে দিলেন ।
অতঃপর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর নিকট থেকে বিদায় নিয়ে নিজগৃহে চলে গেলেন ।