হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 22

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 22

৫. জয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)

হযরত জয়নাবের পিতা ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ কোরায়েশ বংশের আসাদিয়া গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত সর্দার জাহান। তাঁর মাতা ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আপন ফুফু উমাইয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব। ইসলামের প্রথম অবস্থায়ই

পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে হযরত জয়নাবও পবিত্র ইসলামের সুশীতল ছাযা তলে আশ্রয় গ্রহণ করেন ।
মুসলমানদের ওপর মক্কার অবিশ্বাসীদের উৎপীড়ন যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নির্দেশে তারা প্রথমে মক্কা হতে আবিনিনিয়া, তারপর আবিসিনিয়া হতে মদীনায় হিজরত করেন।
হযরত যায়েদ ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর একান্ত ভক্ত ও অনুরক্ত। তিনি প্রথমি ক্রীতদাস ছিলেন ।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁকে আজা করেন ও পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। দেখতে তিনি তেমন সুন্দর ও সুপুরুষ ছিলেন না ।
হিজরী ৪র্থ সনে যায়েদের সাথে জয়নাবের বিবাহের প্রস্তাব দেয়া হলে, জয়নাবের পিতা ও জয়নাব প্রথমে রাজী হননি। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং বিয়েতে সম্মতি দান করেন।

যথারীতি যায়েদের সাথে বিবি জয়নাবের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটা উভয়ের জন্য ছিলো প্রথম বিয়ে 1
কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের এ বিয়ের স্থিতিকাল ছিলো মাত্র এক বছরের মতো। এ সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তেমন বনিবনা হয়নি ।
হযরত জয়নাব (রাঃ) ছিলেন উচ্চ বংশীয়া, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পরমাত্মীয়, কোরেশ রমণী
মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস যায়েদের সাথে এ বিবাহ কোনোক্রমেই তিনি মেনে নিতে পারেনি। 

জয়নাব বংশ-গৌরবে, গরবিনী, অপরূপা সুন্দরী ও আত্মগরবে অভিমানিনী পয়গম্বর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সহধর্মিনী হওয়ার একটা দুর্দমনীয় সাধ পূর্ব থেকেই তার মধ্যে ছিলো । যায়েদের সাথে তার বিবাহ মেনে নিতে না পারার এটাও একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ।

আল কুরআনের সূরা আল-আহযাব আয়াত ৩৭, মহান আল্লাহ্ বলেন :
“তখন আমি তাকে তোমার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করলাম।” এই আয়াতের পর জয়নাব ও রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বিয়ে নিয়ে কারো কোনো বক্তব্য থাকার কথা নয় ।

কেননা, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজে বিয়ের সংবাদ দিচ্ছেন। আপতিক বিবচেনায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে জয়নাবের বিয়ে পর্যালোচনা এবং ও ইতিহাসবেত্তাদের উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে যে অবস্থা দাঁড়ায়।

তা হচ্ছে ঃহযরত যায়েদ ও হযরত জয়নাবের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সুখের না হওয়ায় এ েিবয় ভেঙ্গে যায় এবং জয়নাব (রাঃ) রাসূলের (সাঃ)-এর বোন (এবং খালাত-মামাত-ফুফাত-চাচাত বোনের সাথে বিয়ে হওয়ার বাধা নেই।) তাই জয়নাব (রাঃ) পুনরায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। 

কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অন্যান্য মানুষে তত হুট করে কিছু করে ফেলতে পারেন না। তিনি আল্লাহ্র নবী । তাই মহান আল্লাহ্ থেকে কোনো নির্দেশ আসে কিনা
অপেক্সা করতে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কর্তৃক অপেক্ষা করার বড় কারণ, যায়েদ তাঁর পালিত পুত্র। আরবে তখন পালিত পুত্রকে আপন পুত্রের মর্যাদা দেওয়া হতো। জয়নার পূর্বে বোন ছিলেন।

যায়েদের সাথে বিয়ে হওয়ার পর সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। সুতরাং জয়নব (রাঃ) চাইলেই রাসূল (সাঃ) হঠাৎ করে বসতে পারেন না।
এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ্ সূরা আহযাব নাযিল করেন।
তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা 'বিহার' কর তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি
এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ্ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।

তোমরা তোমাদের তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা যখন তাঁর পাক কালাম নাযিল করে তাঁর প্রিয় হাবীবের সন্দেহ মুক্ত করলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তখন নিঃসংকোচে জয়নাবকে বিয়ে করলেন।

মৌখিক পাতানো সম্বন্ধকে অস্বীকার করে মুসলমানরা যে পরস্পর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেত পারে, এই আদর্শ স্থাপন করাই হযরত জয়নাবের (রাঃ) সাথে মোহাম্মদ (সাঃ)-এর বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য।

হযরত জয়নাব (রাঃ) ৫৩ বছর জীবিত ছিলেন। হিজরী ২০ সালে পরলোক গমন করেন ।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর নামায পড়ান ।
তারপর তিনি উম্মাহাতুল মু'মিনীনদের কাছে পরামর্শ চান যে, বিবি জয়নাবের (রাঃ) লাশ করবে কে নামাবে?
তাঁরা উত্তর দিলেন - বিবি জয়নাব যাদের সাথে দেখা করতেন, তারাই লাশ করবে নামাবে ।

সুতরাং সে অভিমত অনুসারে হযরত উসামা, মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন জাহাশ, আবদুল্লাহ বিন আহমদ বিন জাহাশ তাঁর পবিত্র লাভ কররে রাখেন । জান্নাতুল বাকীতে তাঁর কবর দেয়া হয়।
শিবলী নু'মানী ওয়াকেদীকে উদ্ধৃত করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে ৩৫ বছর বয়সে তাঁর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল এবং অন্যান উম্মহামুতল মু'মিনীনদের মাঝে তিনিই সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন ।

৬. হযরত মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ)

তখন মিসরের রোমান শাসনকর্তা ছিলেন মুকাউকিস। হযরত তাঁর কাছেও ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেন। মুকাউসিক হযরতের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন।
প্রকাশে তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে তার মন হযরতের চরণতলে নিবেদিত হয়েছিল।

তিনি অত্যন্ত বিনম্র ভাষায় হযরতের পত্রের উত্তর দেন। বশ্যতা স্বীকারের নিদর্শন হিসেবে তিনি হযরতের কাছে মারিয়া ও শিরী নাম্নী দু'জন খ্রিষ্টান রমণী এবং একটি দুষ্প্রাপ্য শ্বেতবর্ণ অশ্ব উপঢৌকন পাঠান ।
দয়ার সাগর হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মুকাউসিকের এই উপঢৌকন প্রত্যাখান করেননি ।

আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এই আর ও উপঢৌকন সানন্দে কবুল করলেন। প্রথমে মারিয়াকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়। মারিয়া তা নির্মল চিত্তে গ্রহণ করলেন।

তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সম্পূর্ণ ইসলামী বিধান মোতাবেক তাকে বল পত্নীত্বে বরণ করে নেন এবং বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রপতি মুকাউকিসের উপরোকনের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করেন।
বিবি মারিয়া বিততিয়ার সাথে মহানববীর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় হিজরী ৭ম সালে।

কারো কারো মতে- “এই বিবাহের পরেই নতুন কোন স্ত্রী গ্রহণ ও বর্জন অহীযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
হযরত মারিয়া কিবতিয়ার গর্ভেই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অন্যতম পুত্র হযরত ইব্রাহীম জন্মগ্রহণ করেন।

হিজরী ৮ম সালে আওয়ালী নামক স্থানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মারিয়া কিবতিয়া সেখানেই বসবাস করতেন।
হযরত ইব্রাহীমের জন্ম উপলক্ষে লোকেরা আওয়ালীকে মাশরাব নামে অভিহিতি করেন।
শ্বেবই অশ্বটিকেও হযরত সাগ্রহে নিজে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রায়ই এতে সাওয়ার হয়ে বেড়াতেন।

এর নাম ছিল 'দুলদুল। হযরতের মৃত্যুর পর ইমাম হোসেন। একে ব্যবহার করতেন। ইতোপূর্বে বিবি খাদিজা ছাড়া আর কোনো উন্নযুল মু'মিনীন রাসুল্লাহ্ (সাঃ)-কে সন্তান উপহার দিতে পারে নি।
হযরত ফাতেমার (রাঃ) জন্মের পঁচিশ বছর পর আবার হযরতের গৃহ সন্তান আগমনের সংবাদ উৎফুল হয়ে উঠে

হযরত মারিয়ার (রাঃ) গর্ভজাত সন্তান ইব্রাহীম (রাঃ) দীর্ঘায়ু লাভ করেননি। অল্প বয়সেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
Part 23 এ  উজ্জ্বল মুনিনীনদের তালিকা প্রদান করা হলো :