হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 20

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 20

খাদীজা (রাঃ)-এর পরবর্তী স্ত্রীগণ

১. হযরতের স্ত্রী সাওদা (রাঃ)
খাদিজা বেঁচে থাকতে নবী কখনো দ্বিতীয় দার পরিগ্রহের কতা মনে আনেননি, যদিও তিনি তিনি চল্লিশ পার হতে না হতেই খাদিজা পঞ্চাশশোর্ধ পৌঢ়া হয়ে পড়েছিলেন। এর পর আরও দশ বছর তাঁরা একত্রে সংসার করেছেন তখনও নবী খাজিদাকে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন, অন্য কোনও রমণীর কথা কখনো চিন্তা করনে নি।

কিন্তু এখন তিনি অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়লেন। একজন গৃহিণী না হলে তার সংসার আর চলে না । সাওদা (রাঃ)-এর পিতার নাম জাময়া বিন কাসেম বিন আবদে শামস। মাতার নাম শামুস বিনেতে কায়েস। 

ইনি আরবের বিখ্যাত কোরাইশ গোত্রের কন্যা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্রা স্ত্রীগণের মধ্যে হযরত সাওদা (রাঃ) এই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকার হয়েছেন যে, তিনিই খাদীজা (রাঃ) মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাথেধ পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

একই বছর হযরতের প্রিয় চাচা আবু তালিব ও বিবি খাদীজাদুল কোরা ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জীবনে নেমে আসে অমানিশার এক ঘোর
অন্ধকার একদিকে শত্রুদের ভীষণ ষড়যন্ত্র অন্য দিকে পরিবারের অচল অবস্থা তাঁকে ব্যাকুল করে তোলে। উম্মে কুলসুম ও শিশু কন্যা ফাতেমার দায়িত্ব তিনি কার উপর ন্যস্ত করবেন, এ নিয়ে মহাসংকটে নিপতিত হন।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের দীর্ঘ ২৩ বছর পর হযরত সাওদা (রাঃ) ৮১ বছর বয়সে ইন্তেকাল কনের। মদীনার গোরস্থান জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে
দান করা হয়। সাওদার (রাঃ) মৃত্যুর সন তারিখ সম্বন্ধে মতভেদ আছে। 

ঐতিহাসিক ওয়াকেদী বলেন হযরত সাওদা (রাঃ) আমীর মুয়াবিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেলাফতকালে হিজরী ৫৪ সালে মৃত্যুমুখে পতিত হন। কিন্তু হারেজ ইবনে হাজার বলেন, তিনি হিজরী ৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করে।
ইমাম বুখারী মতে তিনি হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মৃত্যুবরণ।

২. হযরত আয়েশা (রাঃ)

'ছুরীদ' যেমন বাদ্য সামগ্রীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনি রমনীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারিণী।
রমণীদের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জননী এবং ফেরাউনের আয়া ব্যতীত অপর কোন মহিলা আয়েশা হতে মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারেন নাই।

হুযুর (সাঃ)-এর বিবিগণের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) ছিলেন তৃতীয়। হিজরী ৩ সনে, নবুওতের দশম সালে ২৫শে শাওয়াল মোতাবেক ৬২০ সালের মে মাসে বিনা আড়ম্বরে পাঁচশত দিরহাম মোহর ধার্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

হযরত আয়েশা (রাঃ) ছিলেন, হুযুর (সাঃ)-এর বিবিগণের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেধাশক্তিসম্পন্না, বিদূদী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, গৃহকমে সুনিপুণা, শিক্ষয়িত্রী, সত্যের সাধিকা, অগ্নিবর্ষী বাগীশ, সচ্চরিত্রবতী, মধুর আলাপী। মানবীয় শুওশের সকল গুণের আধার বলা যায় ।

পৈত্রক নামানুসারে লবক ছিদ্দীকা। আসল নাম আয়েশা। কুনিয়াত উম্মুল মু'মিনীন ও উম্মে আব্দুল্লাহ।
সবক হিসাবে তিনি মোহাইরা নামেও অভিহিতা হতেন। প্রকাশ থাকে যে, উন্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা ছিলেন নিঃসন্তান ।

একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আজ করলেন – ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁদের পূর্ব সন্তানগণের নামানুসারে কুনিয়াত গ্রহণ করিয়াছেন আমি কার নামে কুনিয়াত রাখব? রাসূল করীম (সঃ) বললেন- আপনার বোনের বেটা আব্দুল্লাহ্ নামে আপনি কুনিয়াত গ্রহণ করুন।

এরপর হতে উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা উম্মে আব্দুল্লাহ নামে পরিচিতা হন।
এই আব্দুল্লাহ হলেন- তাঁর বৈমাত্রের জ্যোষ্ঠা বোন হযর আসমান পুত্র রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে মোমাইরা লবক বলে এই নামেই বেশি ডাকতেন। কারণ তাঁর গায়ের রং গৌর বর্ণ ছিলবিধায় ।

হযরত আয়েশার জীবনী লিখতে গেলে বহুল প্রচলিত ইংরেজি প্রবাদ 'মর্নিং সোজ দি ডে' অর্থাৎ ঊষার কিরণ দেয়ার সাথে সাথেই দিনের অবস্থা কেমন হবে অনেক উপলব্ধি করা যায় ৷ শিশুর শৈশব অবস্থার প্রতি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় এই শিশু তার বয়ঃপ্রাপ্তকালে তেমন হবে ।

তার পরবর্তী কর্মজীবনের অনেক কিছুই এই শৈশবকালেই তার চাল-চলন, কথাবার্তা, উঠা-বসা, আচার-ব্যবহার এবং মেধাশক্তির দ্বারা পরিষ্কারভাবে সমাজের অপরাপরের নিকট, বিশেষ করে আপন পরিবার-পরিজনের নিকট দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেয় ।

নবুওতের দশম সালের ২৫ শে শাওয়াল তোমাবেক ৬২০ সালের মে মোতাবেক পাঁচশত দিরহাম মোহর ধার্য করে আরবের চিরাচরিত প্রথার শিরে কুঠারাগহাত করে বিনা আড়ম্বরে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর সাথে আয়েশার বিবাহপর্ব অনুষ্ঠিত হয় ।