হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 11

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 11

দেন মোহর প্রসঙ্গে

প্রথমেই আলোচনা করব মোহরানা সম্পর্কে,
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিবাহে যে মোহরানা ধার্য হয়েছিল; তাতে সব ঐতিহাসিক একমত। কিন্তু তা কত ধার্য হয়েছিল, সে ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত ব্যাক্ত করেছেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পিতৃব্য আবু তালিব বিয়ের সময়ে যে খুবহ দান করেছিলেন, তাতে পরিস্কার বোঝা যায় যে,
তিনি মোহরানা স্বরূপ ত্রিশটি উটের কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং তাই ধার্য হয়েছিল।

অথচ কোন কোন ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন যে, মোহরানা ধার্য হয়েছিল বার আউকিয়া যা ৫০০ শত দেরহামের সমতূল্য।
অনেক বর্ণনায় দেখা যায় যে, মোহরানা ৪০০ শত মেছকাল ধার্য হয়েছিল। উহাতে ৬০০ দেরহাম হয়ে থাকে।
কিন্তু অন্য একজন খ্যাতনামা আলেম বলেন যে, হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিয়েতে ৪০০ শত দেরহাম মোহরানা ধার্য করা হয়েছিল।

খুৎবাহর প্রচলন

তৎকালীন বিয়ে প্রথার মধ্যে খুৎবাহ পাঠও একটি অপরিহার্য রীতি ছিল । খুৎবাহ পাঠ করার রীতি এ যুগেও আছে। তবে এ যুগে বিয়ের খুৎবাহ পাঠ করেন যিনি বিয়ে পড়ায়ে দেন।
আর এ হুৎবাহর মধ্যে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-এর প্রসংশা করে পাত্র-পাত্রীর প্রতি নসিহত এবং সমবেত লোকওদের কিছু ধর্মীয় উপদেশাদি
প্রদান করা হয়।

পক্ষান্তরে প্রাচীন কালের খুৎবাহর রীতি ছিল অন্য রকমের। যেমন আমরা দেখতে পাই, পাত্র ও পাত্রীর উভয়ের গার্জিয়ানই পৃথক পৃথকভাবে ভাষণ প্রদান করেন এবং তারা প্রথমেই স্রষ্টার স্তুতিবাদ ঘোষণা করেন।
তারপরে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বংশ গৌরব ও মর্যাদার বিষটিকে খুব জোরে-শোরে প্রচার করেন।
শেষভাগে পাত্র ও পাত্রীর কল্যাণ এবং মঙ্গল কামনা করে ভাষণের ইতি টানা হয়।

তবে খুৎবাহের প্রধান অংশই হল আত্মগৌরব প্রচার করা এবং তাঁর সাথে আত্মগরিমা ও অহঙ্কারকে কৌশলে ফুটায়ে তোলা ।
এটা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আরবের গোত্র প্রীতি ও স্বজন প্রীতির অত্যাধিক প্রাবল্যের ফলেই বিয়ের সময় এরূপ আত্মগৌরব প্রকাশের প্রচলন হয়েছিল ।

নীতিগতভাবে বিবাহে খুৎবাহর প্রচলন উত্তম কাজ, তবে এ ধরণের খুৎবাহ কখনও উত্তম কাজ হতে পারে না।
উত্তম খুৎবাহ হল যা বর্তমান সমাজে বিয়ে অনুষ্ঠানকালে পাঠ করা হয়।

অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ে অনুষ্ঠানে আর এক ব্যাপার দেখা গেল যে, বিয়ের ইজাব-কবুল হল দু' পক্ষের দুজন অভিভাবকের মাধ্যমে । একপক্ষের অভিভাবক প্রস্তাব করলেন এবং অন্য পক্ষের অভিভাবক তা কবুল করলেন।
এ ধরণের বিয়ে প্রথা বর্তমানেও প্রচলিত আছে। তবে তারা সাক্ষীর সম্মুখে পাত্র ও পাত্রীর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে নেন । 

অথবা পাত্র ও পাত্রী পূর্বাহ্নেই তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবকগণকে প্রতিনিধি মনোনয়ন করে দেয় । যত দূর মনে হয় এ ব্যবস্থা পূর্বকালেও প্রচলিত ছিল ।
তবে পাত্র ও পাত্রীর এরূপ অনুমতি বা নিজেদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের পূর্বেই সম্পন্ন হত । তা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের পক্ষে দেখা সম্ভব হত না ৷

হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর সাথে হযরত খাদীজা (রাঃ) এর বিয়ে তদ্রূপ হয়েছিল।
আর যদি পূর্বকালে পাত্র পাত্রী ইজাব কবুল ব্যবস্থা না থাকে এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ে সে পূর্বকালীন ব্যবস্থানুসারেই
হয়ে থাকে।

তবে তাতেও দোষের কিছু নাই। কেননা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ে হয়ে, যখন রাসূল (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হন নেই, ইসলামের অভ্যুদয় ঘটে নাই। সুতরাং এ সময়ে পারিবারিক ও সামাজিক কাজ-কর্মের রীতি-নীতি তো প্রাচীন ব্যবস্থা মতই চলবে।

তাতে দোষের কিছু নাই। বিয়ের বালেগ পাত্র ও পাত্রীর ইজাব কবুলের প্রয়োজন বা বাধ্য-বাধকতা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছিল ইসলাম আগমনের পরে।
ইসলামই এ নির্দেশ প্রদান করেছে। সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ের সময় যদি বিধি অনুসারে ইজাব-কবুল ব্যবস্থা পালিত নাও হয়ে থাকে তবে তাতে দোষের কিছুই হয় নাই ।

নৃত্যগীত প্রসঙ্গ

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ে অনুষ্ঠানকালে নৃত্যগীত অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিভিন্ন লোকের বর্ণনায় দেখা যায় । এক শ্রেণীর লোক সে ঘটনাকে দলীল স্বরূপ গ্রহণ করে বিয়ে কালেতো বটেই, তাছাড়া অন্যান্য উৎসব আনন্দসূচক অনুষ্ঠানাদিতেও নাচ-গান করা সিদ্ধ
বলে প্রচার করে।

ঐ সব অজ্ঞ লোকগণ একটি বারও একথা ভেবে দেখে না যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ঐ বিয়েটি ছিল ইসলাম আসার পূর্বে।
অর্থাৎ নাচ-গান ইসলামে সিদ্ধ কি অসিদ্ধ, তা তখনও স্থিরকৃত হয় নাই । ঐ সময়ে কোন কিছু করা হয়ে থাকলে তা পরবর্তী যুগেও সিদ্ধ হওয়ার দলীল হতে পারে না ৷

ইসলাম আসার পরে যে ঐসব কাজ অন্যায় এবং অপছন্দনীয় রূপে পরিণত হয়েছে, হাদীস শরীফে তার স্পষ্ট প্রমাণ আছে ।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ের পর হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁর কতিপয় অল্প বয়স্কা সহচরীকে হুকুম দিলেন যে,
তোমরা নাচ-গান কর।

তদানুসারে তারা দফ বাজায়ে নাচ-গানে রত হল । ইতোমধ্যে সেখানে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে পড়লেন ।
তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে এভাবে নাচ-গান চলছে দেখে অবাক হয়ে গেলেন এবং নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে কন্যা আয়েশা (রাঃ)-কে চপেটাঘাত করে ক্রোধব্যঞ্জক স্বরে বললেন, ওহে! তুমি না নবীর স্ত্রী । এ কি ব্যাপার চলছে? এখনি এসব বন্ধ কর ।

এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মুসলমানদের কোন উৎসব অনুষ্ঠানে নৃত্য ও গান-বাজনা করা ঠিক নয় ।
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রতি কোরায়েশদের আক্রোশ
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর রূপ-গুণ, ধন-সম্পদ ও নানাবিধি কারণে তাঁর সাথে পরিণয়বদ্ধ হতে কোরাইশ গোত্রের বহু লোকই লালায়িত ছিল এবং এজন্য বহু পাত্র প্রস্তাবও দিয়েছিল।

এদের মধ্যে এক জন ছিল নানা গুণে গুণবান; তথা জ্ঞানী, ভদ্র, রুচিবান শান্তশিষ্ট প্রভৃতি ।
পক্ষান্তরে ধণী, নির্গুণ, গর্বিত, দাম্ভিক এবং অজ্ঞান লোকও উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয়ে ভাবলেন যে, পাত্র ও পাত্রীর অভিভাবকগণের যখন মত নাই ।
তখন আর এটা নিয়ে ভেবে কি লাভ হবে? এ বিষয়ে আর চিন্তা করাও বৃথা । এরূপ মনে করে তারা তাদের ব্যর্থতাকে ভুলে গেল ।

অথচ শেষাক্ত শ্রেণীর মধ্যে যারা বিশেষ আত্মাভিমানী ও দাম্ভিক চরিত্র বিশিষ্ট ছিল, তারা হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে বিয়ে করতে না পারাকে নিজেদের জন্য বিশেষ অপমান এবং পরাজয় মনে করল ।
তারা যখন দেখল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
তখন তারা তাদের মনের আক্রোশ মিটাবার বাসনায় একটা কুট কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করল ।

তারা কোরাইশ গোত্রের শুভাকাংখী সেজে মক্কার সমস্ত কোরায়েশ গোত্র নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করল
বৈঠকে উহারা নিম্নোক্ত বক্তব্য তুলে ধরল :
সমবেত অভিজাত কোরাইশকুলের লোকগণ! আমরা মক্কার সেরা অভিজাত বংশীয় লোক ।
তদুপরি প্রভু আমাদেরকে যথেষ্ট ধন-সম্পদ দিয়ে আমাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছেন । আমাদের অভাব অনটন নেই।

সকলেই আমরা স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী। আমরা সবাই পরম সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি।
এটা আমাদের স্বাতন্ত্র্য এবং এক চিরন্তন ঐতিহ্য । পরনির্ভরশীল নিঃস্ব দরিদ্রের সাথে আমাদের ব্যবধান এখানেই।
তবে আমাদের গোত্রের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্ত, তারা অযোগ্যতার কারণে দুর্দশায় লিপ্ত ।
তারাই আমাদের বংশীয় গৌরব বিনষ্টকারী ও আমাদের কাছে অন্য গোত্রের
লোকদের তুল্য।

সুতরাং যতদিন না তাদের অবস্থার পরিবর্তন আসে, আমাদের কোনরূপ সম্পর্ক না রাখাই ভাল ।
কিন্তু আপনারা দেখুন, কি পরিতাপের বিষয়, খোয়াইলিদ-দুহিতা হযরত খাদীজা আমাদের কোরাইশ কুলের শ্রেষ্ঠ ধনবতী এবং বুদ্ধিমতীও বটে ।
অথচ তিনি কি একটি অঘটনই না ঘটায়ে দিলেন।

হাশেমী গোত্রের আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ (সাঃ) এক অতি দরিদ্র যুবক। হযরত খাদীজা (রাঃ) এর ব্যবসায় ক্ষেত্রে সে বেতনভোগী কর্মচারীরূপে কর্মে নিয়োজিত ।
তারই সাথে হযরত খাদীজা (রাঃ) অবাধে পরিণয়াবদ্ধ হলেন। তার জন্য সুযোগ্য পাত্রের কোন অভাব ছিল না ।

দেশের শ্রেষ্ঠ ধনী ও গুনী লোকগণ তাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল।
কিন্তু হযরত খাদীজা (রাঃ) সে সব প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে যাকে আমরা নগণ্য মনে করি তাকেই নির্দ্বিধায় স্বামীরূপে বরণ করে নিলেন।

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সে খুব সাধু পুরুষ । হল বা তা কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? অর্থহীন গরীব লোকের এ সাধুতা ও গুণাবলি কয়দিন থাকবে? হযরত খাদীজা (রাঃ) কি এসব কথা বুঝতে পারেনি? নিশ্চয় পেয়েছে। আসলে কথা হল, এটা তার একটা অত্যন্ত একগুয়েমী ও সীমাহীন স্পর্দ্ধা । 

এটা আমাদের সাথে একটা জিদ, অসহযোগিতা এবং চরম বাড়াবাড়ি। এটা তাদের আপন লোককে অপর করে অপর লোকের সাথে মিত্রতা সৃষ্টির
অপপ্রয়াস মাত্র। কাজেই আমাদের বক্তব্য হল, যদি আপনারা তার এ পদক্ষেপকে অন্যায় ও অসঙ্গত মনে করেন। তবে তাদের প্রতি কোন সংস্রব রাখবে না, উঠাবসা করবে না অর্থাৎ তাকে একঘরে করে রাখব ।

বাস্তবিক পক্ষে সে অবস্থাই শুরু হল । তারা তার সাথে সর্বপ্রকার সম্পর্কই ছিন্ন করে দিল এবং হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর স্বামী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কুদৃষ্টিতে দেখতে লাগল ।

কোরাইশদের ব্যবস্থার প্রতি উত্তর

হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁর অতুলনীয় সৌভাগ্যের বলে যে দুর্লভ গুণবান স্বামী লাভ করেছেন তাতে শুধু মক্কার কোরাইশগণ কেন? সারা দুনিয়ার মানুষ যদি তাকে একঘরে করে দেয়, তাতেও তাঁর কিছু যায় আসে না, তাও তিনি পরোয়া করেন না। কাজেই এতে তিনি তেমন কোন গুরুত্বই দিলেন না।
তবে কোরাইশদের এ অন্যায় সিদ্ধান্তকে তাঁর কিছু সংখ্যক আপন আত্মীয় ও সমর্থন করেছিল, এ জন্য তিনি মানে খুব দুঃখ পেলেন।

আর এ কারণেই তিনি তাদের এ ভুল পদক্ষেপ শোধরারে দেবার জন্যে একটি পথ অবলম্বন করলেন।
তিনি আপাততঃ একটু নরম তার প্রদর্শন করে সমাগত একটি বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিজের বাড়িতে সমস্ত কোরাইশকে দাওয়াত দিলেন।
উহা এমন এক অনুষ্ঠান ছিল যে, হযরত খাদীজা (রাঃ) -এর সাথে কোরাইশদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও এ উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে তারা উপস্থিত না হয়ে পারল না।

হযরত বাদীজা (রাঃ) উপস্থিত মেহমানদেরকে যথাযোগ্য আদর আপ্যায়ন করে পরিশেষে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, উপস্থিত কোরাইশ মন্ডলী! জানতে
আমি অনেক গরীব ব্যক্তির সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি বলে আপনারা আমাকে সমাজ থেকে পৃথক করেছেন। 

আমার সাথে নাকি আর কোনরূপ সম্পর্কে রাখবেন না।
আপনাদের এ সিদ্ধান্তটি খুবই দুঃখজনক। কেননা আমি দেখেছি আপনারা মানুষের প্রকৃত সম্পদ জ্ঞান গুণ সততা সত্যবাদিতা তথা মহৎ চরিত্রের তুলনায় অর্থ ও ধন-সম্পদকে বেশি মূল্যবান মনে করছেন।

আসলে কিন্তু উহা মানুষের মহত্ত্বের কাছে একেবারেই নগন্য। একথাটা আপনার চিন্তা করে
আর তা চিন্তা করার পরে বলুন, আমি কি অন্যায় করেছি, না নার কাজ করেছি। এ পর্যন্ত বার হযরত সাদীয়া (রাঃ) কিছুক্ষণ আপেক্ষা করলেন, কিন্তু
কোন কথা না।

তখন তিনি পুনরায় বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি আপনাদের দৃষ্টিতে ধন-সম্পদই বড়, উহাই আপনাদের কাছে তুচ্ছ ও নগণ্য।
আর এ কারণেই সম্ভবতঃ আমার স্বামীকে আপনারা নগণ্য ভাবেন এবং তাঁর প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আমি চাইনা যে, আপনারা আমার ও আমার স্বামীর একই গোত্র হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি ও বিশেষতঃ আমার স্বামীর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করবেন।

এর প্রতিবিধান কল্পে আপনাদেরই সম্মুখে আজ আমি একটা ব্যবস্থা করব।
সে জন্যেই আমি আজ আপনাদেরকে আমার এখানে আহ্বান করেছি। অতঃপর হযরত খাদীজা (রাঃ) সমবেত কোরাইশদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা সকলে জেনে রাখুন, আমি সম্পূর্ণ সুস্তমনে একেবারে হেদায় আমার স্থাবর-অস্থাবর অর্থ-সম্পদ যা কিছু আছে।

তা সমুদয় এ মুহূর্তে আমার নিঃস্ব স্বামী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইবনে আবদুল্লাহকে দান করে দিলাম ।
এখন থেকে তিনি আমার সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক হলেন। অতঃপর তিনি যদি আমার মত রিক্ত, নিঃস্ব কাঙ্গালীকে পাক চরণে আশ্রয় দেন, তবে তাই আমার জন্য পরম সৌভ্যাগের বিষয় বলে মনে করব।

হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর এ অভাবনীয় কাজ দেখে এবং তাঁর মুখের বাক্য শুনে কোরাইশগণ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তারা এ ধরনের ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের দৃষ্টান্ত জীবনে কখনও দেখাতো দূরের কথা প্রবণও করে নাই।

কেহ কোন কথা বলতে পারল না। অনেকেরই মনে ইচ্ছা জাগল, হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রশংসা করবে। কিন্তু সে ভাষাও কারও জানা ছিল না।
কোরাইশদের হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর প্রতি আক্রোশ, ক্ষোভ এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি হিংসা, ঈর্ষা এবং কুদৃষ্টিপাত করা ঐদিন থেকে দূর হয়ে গেল।